অর্থনীতি

অর্থনীতির বিষয়বস্তু বা পরিধি

অর্থনীতির বিষয়বস্তু বা পরিধি – অর্থনীতি হলো সামাজিক বিজ্ঞানের একটি শাখা যা সমাজবদ্ধ মানুষের আর্থিক বিষয় তথা পণ্য এবং সেবার উৎপাদন, সরবরাহ, বিনিময়, বিতরণ এবং ভোগ ও ভোক্তার আচরণ নিয়ে আলোচনা করে। মানুষের চাহিদা, ক্ষমতা, সামর্থ্য ও সম্পদের সীমাবদ্ধতা প্রভৃতি কারণে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের উদ্ভব হয়েছে। আর্থ-সামাজিক চাহিদার প্রকৃতি, পরিধি ও পরিমাণের ক্রমাগত পরিবর্তনের ফলে অর্থনীতির বিষয়বস্তুর ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। অর্থনীতির বিষয়বস্তু বা পরিধি অত্যন্ত ব্যাপক। অর্থনীতির বিষয়বস্তু বা পরিধি নিয়ে অর্থনীতিবিদদের মধ্যে নানা মতভেদ রয়েছে। অর্থনীতির বিষয়বস্তুকে নিম্নলিখিত প্রধান প্রধান বিষয়গুলোতে বিভক্ত করা যেতে পারে:

১. ব্যষ্টিক অর্থনীতি (Microeconomics):

এটি ব্যক্তি, পরিবার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য ক্ষুদ্র অর্থনৈতিক এককগুলোর আচরণ এবং পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করে। ব্যষ্টিক অর্থনীতির অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে পণ্য এবং সেবার চাহিদা ও সরবরাহ, বাজার ভারসাম্য, পূর্ণ প্রতিযোগিতা, অসম্পূর্ণ প্রতিযোগিতা, মুদ্রানীতি, আর্থিক নীতি, শ্রমবাজার ইত্যাদি।

আরও দেখুন:
অর্থনীতির প্রকারসমূহ কি কি?

২. সামষ্টিক অর্থনীতি (Macroeconomics):

এটি একটি দেশের অর্থনীতির সামগ্রিক আচরণ নিয়ে আলোচনা করে। সামষ্টিক অর্থনীতির অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে জিডিপি, বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতি, ঋণ, আর্থিক স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ইত্যাদি।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

৩. উন্নয়ন অর্থনীতি (Development Economics):

এটি উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করে। উন্নয়ন অর্থনীতির অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে দারিদ্র্য, ক্ষুধা, অশিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, শিল্পায়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন, আর্থিক উন্নয়ন ইত্যাদি।

৪. অর্থনৈতিক তত্ত্ব (Economic Theory):

এটি অর্থনৈতিক ঘটনাগুলো ব্যাখ্যা এবং ভবিষ্যদ্বাণী করার জন্য ব্যবহার করা হয়। অর্থনৈতিক তত্ত্বের অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে পণ্যের মূল্য নির্ধারণ, মুদ্রাস্ফীতি, ঋণ, আর্থিক স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ইত্যাদি।

৫. অর্থনৈতিক ইতিহাস (Economic History):

এটি অর্থনীতির বিবর্তন এবং বিভিন্ন সময়ের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করে। অর্থনৈতিক ইতিহাসের অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে কৃষি বিপ্লব, শিল্প বিপ্লব, বিশ্বযুদ্ধ, আর্থিক সংকট ইত্যাদি।

অর্থনীতির বিষয়বস্তু সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়েছে। নতুন নতুন অর্থনৈতিক সমস্যার উদ্ভব হওয়ার সাথে সাথে অর্থনীতিবিদরা নতুন নতুন তত্ত্ব এবং ধারণা প্রবর্তন করেছেন। বর্তমানে, অর্থনীতি একটি বহুমুখী এবং জটিল বিষয় হয়ে উঠেছে। নিম্নে অর্থনীতির বিষয়বস্তু বা পরিধির কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরা হলো:

১. অর্থনীতি একটি সামাজিক বিজ্ঞান:

অর্থনীতি মানুষের আর্থিক কার্যকলাপের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। এটি মানুষের চাহিদা, আচরণ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া এবং সামাজিক ব্যবস্থার উপর অর্থনৈতিক নীতিগুলোর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করে।

২. অর্থনীতি একটি বাস্তব বিজ্ঞান:

অর্থনীতিবিদরা বাস্তব বিশ্বের অর্থনৈতিক সমস্যাগুলো সমাধান করার জন্য তত্ত্ব এবং ধারণাগুলো ব্যবহার করেন।

৩. অর্থনীতি একটি পরিবর্তনশীল বিজ্ঞান:

অর্থনীতির বিষয়বস্তু এবং তত্ত্ব সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়। নতুন নতুন অর্থনৈতিক সমস্যার উদ্ভব হওয়ার সাথে সাথে অর্থনীতিবিদরা নতুন নতুন তত্ত্ব এবং ধারণা প্রবর্তন করেন।

উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে বলা যায় যে, অর্থনীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে। অর্থনীতির জ্ঞান আমাদের অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সাহায্য করে। এটি আমাদের অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা এবং ভবিষ্যত সম্ভাবনা সম্পর্কে বোঝার ক্ষেত্রেও সহায়ক। নিম্নে অর্থনীতির বিষয়বস্তু বা পরিধি আলোচনা করা হলো-

১. মৌলিক অর্থনৈতিক সমস্যা ও তার সমাধান:

মানুষের মৌলিক অর্থনৈতিক সমস্যা নিরুপণ ও তা সমাধানের উপায় উদ্ভাবন অর্থনীতির প্রধান বিষয়বস্তু। মানুষের চাহিদা বা প্রয়োজনের শেষ নেই। দুনিয়াতে যে সম্পদ রয়েছে তা দিয়ে মানুষের সকল চাহিদা পূরণ করাও কঠিন। এই সম্পদকে ব্যবহার করে মানুষের চাহিদা পূরণে অর্থনৈতিক কর্মকৌশল প্রণয়ন অর্থনীতির বিষয়।

২. অর্থনৈতিক কার্যাবলি আলোচনা:

মানুষের জীবনের কার্যাবলি বহুবিধ। তার ক্ষেত্র অনেক বিস্তৃত। তবে যেসব কর্মকাণ্ড মানুষের শুধু অর্থনৈতিক তা-ই অর্থনীতির আলোচ্য বিষয়। মানুষের অর্থনৈতিক কার্যাবলি হচ্ছে সম্পদের উৎপাদন, ভোগ এবং বণ্টন। আর এসব কাজের সাথে জড়িত রয়েছে পারিশ্রমিক। তাই মানুষের যে সমস্ত কার্যাবলি সম্পদের উৎপাদন, বণ্টন ও ভোগে নিয়োজিত এবং যার বিনিময়ে পারিশ্রমিক পাওয়া যায়, সেসব কার্যাবলি অর্থনীতির আলোচ্য বিষয়।

৩. অর্থনৈতিক আচরণ আলোচনা:

মানুষ সামাজিক জীব। আর অর্থনীতি হলো সামাজিক বিজ্ঞান। তাই মানুষের সমাজ সম্পর্কিত আচরণ নিয়েই অর্থনীতির কাজ কারবার। সমাজবদ্ধ মানুষের প্রতিটি যৌক্তিক কর্মকাণ্ড ও আচরণ অর্থনীতির আলোচ্য বিষয়। মানুষ কাজ করবে, উপার্জন করবে, উপার্জন থেকে কিছু কিছু সঞ্চয় করবে ইত্যাদি মানুষের অর্থনৈতিক আচরণের অংশ। এখানে বলা আবশ্যক যে, সমাজ বর্হিভূত মানুষের আচরণ অর্থনীতির অংশ নয়। অধ্যাপক এল রবিনস যথার্থই বলেছেন, ‘অর্থনীতি সীমিত সম্পদের ব্যবহার সম্পর্কে মানব আচরণ পর্যালোচনা করে।’

৪. অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আলোচনা:

অর্থনীতি নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠভাবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করে। অর্থনীতি একটি ইতিবাচক বিজ্ঞান। অর্থনীতির কাজ হলো সীমাবদ্ধ সম্পদ দিয়ে কিভাবে সীমাহীন অভাব দূর করা যায়, তার বিশ্লেষণ করা এবং মানুষের অভাব ও অনটন মিটানোর জন্য কর্মপন্থা নির্ধারণ করা। বস্তুনিষ্ঠভাবে ‘অর্থনীতি মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ কার্যকলাপ আলোচনা করে’-এ বিষয়ে ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ আলফ্রেড মার্শালের বক্তব্য যথাযথ বলে বিবেচিত।

৫. ব্যবহারিক বিষয় নিয়ে আলোচনা:

অর্থনীতি একটি ব্যবহারিক বিজ্ঞান। বাস্তবভিত্তিক কর্মপন্থা নির্ধারণ ও বাস্তবে মানুষের অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান করা অর্থনীতির কাজ। মানুষের অর্থনৈতিক সমস্যা বাস্তব। তার চাহিদা ও অভাব-অনটন বাস্তব। এই বাস্তবতাকে গুরুত্ব দেয় অর্থনীতি।

৬. সামগ্রিক অর্থনৈতিক কল্যাণ সাধন:

অর্থনীতি এমন একটি সামাজিক বিজ্ঞান যেখানে উৎপাদন ও বণ্টনের মাধ্যমে মানুষের চাহিদার সুষ্ঠু ও দক্ষ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হয়। এর লক্ষ্য হচ্ছে এই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সমাজের মানুষের সামগ্রিক কল্যাণ সাধন করা।

৭. অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ:

মানুষের কল্যাণ ও সামাজিক অগ্রগতির জন্য প্রয়োজন অর্থনৈতিক পরিকল্পনা। অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে ভবিষ্যত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন খুবই জরুরি বিষয়। সঠিক অর্থনৈতিক পরিকল্পনা না থাকলে মানুষের কল্যাণ ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি কল্পনাও করা যায় না।

৮. অর্থনৈতিক হাতিয়ার নিয়ে আলোচনা:

অর্থনীতির চাকা সচল রাখার জন্য এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে এগিয়ে নেয়ার জন্য উৎপাদন, বিনিময়, বণ্টন, ভোগ, ব্যয় ইত্যাদি বিষয়গুলো সুশৃংখলভাবে কাজ করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আর এগুলোর সুষ্ঠু বাস্তবায়নের জন্য দরকার মুদ্রা, কর, মুনাফা, ভাড়া, খাজনা ইত্যাদি অর্থনৈতিক হাতিয়ারগুলোর বাস্তব প্রয়োগ নিয়ে আলোচনা।

মোটকথা, অর্থনীতির বিষয়বস্তু বা পরিধি ব্যাপক, অত্যন্ত জটিল এবং বৈচিত্র্যময়। আর এই ব্যাপকতা মানুষের চিন্তা-ধারায় বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সাথে সাথে ক্রমশঃ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button