ব্যাংক হিসাব

ব্যক্তিক রিটেইল হিসাব কী? জেনে নিন এই হিসাবের বিস্তারিত

পার্সোনাল রিটেইল একাউন্ট হলো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, ভাসমান উদ্যোক্তা এবং অনলাইন ভিত্তিক উদ্যোক্তাদের জন্য এমন একটি একাউন্ট যেটি খুব সহজেই, দ্রুত খোলা যায় এবং যাতে গ্রাহকদের কাছ থেকে পণ্য ও সেবা প্রদানের বিপরীতে পেমেন্ট নেয়া যায়। এই একাউন্টের মাধ্যমে একজন পার্সোনাল রিটেইল একাউন্ট হোল্ডার ব্যবসা পরিচালনার জন্যে তাদের সাপ্লায়ার বা ভ্যালু চেইনের পেমেন্ট পরিশোধ করতে পারবেন।

ব্যক্তিক রিটেইল হিসাব কী?
শ্রমনির্ভর অতিক্ষুদ্র/ ভাসমান উদ্যোক্তা, বিভিন্ন প্রান্তিক পেশায় নিয়োজিত সেবা প্রদানকারীগণ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজস্ব তৈরি/ ব্যক্তিগত উদ্যোগে পরিচালিত পণ্য বিক্রেতা ও সেবা প্রদানকারীগণের পেমেন্ট গ্রহণ পদ্ধতি-কে ডিজিটাল ও প্রাতিষ্ঠানিক করার জন্য যে হিসাব প্রবর্তন করা হয়েছে তাই ব্যক্তিক রিটেইল হিসাব।

আরও দেখুন:
ব্যক্তিক রিটেইল হিসাব সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার

শুধুমাত্র শ্রমনির্ভর অতিক্ষুদ্র/ ভাসমান উদ্যোক্তা, বিভিন্ন প্রান্তিক পেশায় নিয়োজিত পণ্য বিক্রেতা ও সেবা প্রদানকারী এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজস্ব তৈরি/ ব্যক্তিগত উদ্যোগে পরিচালিত পণ্য বিক্রেতা ও সেবা প্রদানকারীগণ পণ্য বিক্রয় বা সেবা প্রদানের বিপরীতে পেমেন্ট গ্রহণের জন্য এবং একইসাথে সাপ্লাই বা ভ্যালু চেইনের ক্রয়মূল্য পরিশোধের জন্য এ ধরনের রিটেইল হিসাব খুলতে পারবেন।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

ব্যক্তিক রিটেইল হিসাব কেন প্রয়োজন?
ব্যক্তি উদ্যোগে পণ্য বা সেবা বিক্রেতাগণ সাধারণত নগদ টাকায় অথবা নিজ নামে খোলা ব্যাংক বা মোবাইল হিসাবে তার পণ্য বা সেবা বিক্রয়ের অর্থ গ্রহণ করে থাকেন। নগদ অর্থ গ্রহণের ক্ষেত্রে অর্থ চুরি, জাল নোট বা প্রতারণার মত সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। একইসাথে, নিজ নামে পরিচালিত উক্ত ব্যাংক বা মোবাইল হিসাবে অর্থ গ্রহণ করলে সে লেনদেনের বিপরীতে ঋণ পাওয়ার কোন সম্ভাবনা থাকে না।

ব্যক্তিক রিটেইল হিসাবে অর্থ গ্রহণ করলে একদিকে যেমন নগদ অর্থ রাখার জটিলতা পরিহার করা যায়, অপরদিকে উদ্যোক্তার লেনদেনের রেকর্ড তৈরি হয় যা ব্যবহার করে ভবিষ্যতে ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

এ হিসাবে আর কী সুবিধা রয়েছে?
ব্যক্তি উদ্যোক্তাগণ তার উদ্যোগের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ক্রয়ের ক্ষেত্রে এ হিসাবের মাধ্যমে সরাসরি পাইকারি বিক্রেতার হিসাবে মূল্য পরিশোধ করার সুযোগ পাবেন। একইসাথে বর্তমানে পণ্য বা সেবা বিক্রির অর্থ মোবাইল/ পিএসপি হিসাব হতে ক্যাশ আউট/ ব্যাংক ট্রান্সফার এর জন্য প্রযোজ্য ক্যাশ আউট চার্জ অপেক্ষা কম চার্জ প্রযোজ্য হবে যা তুলনামূলকভাবে ব্যয় সাশ্রয়ী হবে।

কারা এ হিসাব খোলার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন?
শ্রমনির্ভর অতিক্ষুদ্র/ ভাসমান উদ্যোক্তা, বিভিন্ন প্রান্তিক পেশায় নিয়োজিত পণ্য বিক্রেতা ও সেবা প্রদানকারী এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজস্ব তৈরি/ ব্যক্তিগত উদ্যোগে পরিচালিত পণ্য বিক্রেতা ও সেবা প্রদানকারীগণ ব্যক্তিক রিটেইল হিসাব খোলার জন্য যোগ্য বিবেচিত হবেন। এ ধরণের উদ্যোক্তাগণ তাদের পণ্য বিক্রয় বা সেবা প্রদানের বিপরীতে পেমেন্ট গ্রহণ এবং একই সাথে প্রয়োজনীয় কাঁচামালের মূল্য পরিশোধের জন্য এ ধরনের রিটেইল হিসাব খুলতে পারবেন।

উদাহরণস্বরূপ- মুদি দোকানদার, ভাসমান খাদ্য/ পণ্য বিক্রেতা ও সেবা প্রদানকারী, বাস/ সিএনজি/ রিক্সা চালক, ফেসবুকে বিভিন্ন পণ্য ও সেবা বিক্রেতাসহ এধরণের সেবা প্রদানকারীগণ।

ব্যক্তিক রিটেইল হিসাব খুলতে কী কী কাগজপত্র লাগে?
ব্যক্তিক রিটেইল হিসাব খুলতে জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি এবং পেশার প্রমাণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধির সত্যায়ন অথবা পেশাজীবি সমিতির সুপারিশ/ সার্টিফিকেট লাগবে।

এ হিসাব কার নামে হবে?
হিসাবটি ব্যক্তি উদ্যোক্তার নামে হবে।

নিজ নামে ব্যাংক, এজেন্ট বা মোবাইল হিসাব থাকলে আরেকটি ব্যক্তিক রিটেইল হিসাব খোলা যাবে কি-না?
বর্ণিত গ্রাহকগণের ক্ষেত্রে তাদের সাধারণ এম এফ এস হিসাবের পাশাপাশি একই এনআইডি-এর বিপরীতে নতুন এ হিসাব খোলা যাবে। এ হিসাবের KYC পরিপালনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)-এর সাধারণ KYC নীতিমালা অথবা e-KYC সংক্রান্ত নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে।

ব্যাংক ও এজেন্ট ব্যাংকিং ব্যক্তিক রিটেইল হিসাবে সর্বোচ্চ কত টাকা লেনদেন করা যাবে?
১। বর্ণিত গ্রাহকগণের ক্ষেত্রে তাদের বিদ্যমান সাধারণ ব্যক্তিক চলতি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে এ-ধরনের ব্যক্তিক রিটেইল ব্যাংকিং সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন। অর্থাৎ, ইতোমধ্যে যেসব উদ্যোক্তার নামে ব্যাংকে চলতি হিসাব রয়েছে, তাঁরা উক্ত ব্যাংক হিসাবটিকেই ব্যক্তিক রিটেইল হিসাব মর্মে ব্যবহার করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে প্রয়োজনীয় দলিলাদি সরবরাহ করে উক্ত চলতি হিসাবটিতে রিটেইল হিসাবের সুবিধা চালু করে নিতে হবে। অপরদিকে যে উদ্যোক্তাগণের ব্যক্তিগত চলতি হিসাব নেই, তাদের ক্ষেত্রে ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ তারিখের বিআরপিডি সার্কুলার নং ০২/২০২০ অনুযায়ী ব্যক্তিক চলতি হিসাব খুলে উক্ত রিটেইল ব্যাংকিং সুবিধা প্রদান করা যাবে। এক্ষেত্রে এ হিসাবের জন্য কোন লেনদেন সীমা প্রযোজ্য হবে না।

২। তবে, e-KYC এর মাধ্যমে খোলা ব্যক্তিক চলতি হিসাবের ক্ষেত্রে খোলা হিসাবে মাসিক লেনদেন ১০,০০,০০০ (দশ লক্ষ) ও এককালীন সর্বোচ্চ স্থিতি ১০,০০,০০০ (দশ লক্ষ) টাকা অতিক্রম করতে পারবে না।

মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস ব্যক্তিক রিটেইল হিসাবে সর্বোচ্চ কত টাকা লেনদেন করা যাবে?
১। এ হিসাবের লেনদেন সীমা হবে নিম্নরূপ-

লেনদেনের ধরণলেনদেন সীমা (সংখ্যা)পরিমান (টাকা)
পেমেন্ট গ্রহণ (পারসন টু রিটেইল)দৈনিকপ্রযোজ্য নয়
মাসিকপ্রযোজ্য নয়
৩০,০০০/-
,০০,০০০/-
পেমেন্ট গ্রহণ (রিটেইল টু রিটেইল এবং মার্চেন্ট টু রিটেইল)দৈনিকপ্রযোজ্য নয়
মাসিকপ্রযোজ্য নয়
৩০,০০০/-
,০০,০০০/-
পেমেন্ট গ্রহণ (রিটেইল টু রিটেইল এবং রিটেইল টু মার্চেন্ট)দৈনিক২০
মাসিক২০০
৫০,০০০/-
,৫০,০০০/-
সেন্ডমানি (রিটেইল টু পারসন প্রেরণ)দৈনিক
মাসিক৩০
১০,০০০/-
,০০,০০০/-
ক্যাশ আউট (এমএফএস)দৈনিক
মাসিক৩০
২০,০০০/-
,০০,০০০/-
রিটেইল টু ব্যাংক একাউন্ট (রিটেইল হিসাবধারী নিজ ব্যাংক হিসাবে)দৈনিক
মাসিক৩০
৫০,০০০/-
১০,০০,০০০/-

২। এ হিসাবের এককালীন সর্বোচ্চ স্থিতি হবে ৫,০০,০০০/- (পাঁচ লক্ষ টাকা।

পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার ব্যক্তিক রিটেইল হিসাবে সর্বোচ্চ কত টাকা লেনদেন করা যাবে?
এ হিসাবের লেনদেনের ক্ষেত্রে এ বিভাগ কর্তৃক জারিকৃত পিএসপি (ই-ওয়ালেট) হিসাবের জন্য নির্ধারিত লেনদেন সীমা কার্যকর থাকবে। তবে কোনভাবেই কোন ধরনের লেনদেন মাসিক ১০,০০,০০০/- (দশ লক্ষ টাকা) অতিক্রম করবে না এবং যে কোন সময়ে এককালীন সর্বোচ্চ স্থিতি ৫,০০,০০০/- (পাঁচ লক্ষ টাকা) অতিক্রম করবে না।

এ হিসাবে কিভাবে পণ্যের মূল্য গ্রহণ করা যাবে?
ব্যক্তিক রিটেইল হিসাবধারী ব্যাংকের গ্রাহক হলে ক্রেতা সরাসরি তার হিসাবে নগদ অর্থ জমা করতে পারেন, ব্যাংক তার ব্যক্তিক রিটেইল হিসাবধারীকে পয়েন্ট অব সেলস (পিওএস) মেশিন বা কিউআর সরবরাহ করতে পারে। ব্যক্তিক রিটেইল হিসাবধারীর পিওএস মেশিনে ক্রেতা তার ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে মূল্য প্রদান করতে পারবেন। অপরদিকে ব্যক্তিক রিটেইল হিসাবধারীর কিউআর কোড থাকলে ক্রেতা তার মোবাইল অ্যাপ হতে কিউআর স্ক্যান করে ব্যক্তিক রিটেইল হিসাবে সরাসরি মূল্য পরিশোধ করতে পারবেন।

অপরদিকে মোবাইল ব্যক্তিক রিটেইল হিসাবধারী তার হিসাব নম্বরে সরাসরি অথবা কিউআর স্ক্যান এর মাধ্যমে পণ্য ও সেবামূল্য গ্রহণ করতে পারবেন।

কারা এ হিসাব খুলে দিতে পারবেন?
ব্যাংক, এজেন্ট ব্যাংকিং এজেন্ট, এমএফএস প্রোভাইডার ও পিএসপি কর্তৃক গ্রাহকের পেশা, এ-ধরনের হিসাব খোলার যোগ্যতা এবং মোবাইল হিসাবের ক্ষেত্রে গ্রাহকের নিজ এনআইডি-এর বিপরীতে নিজ নামে রেজিস্ট্রিকৃত মোবাইল নম্বরের বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে নিজস্ব কর্মকর্তার সরাসরি তত্ত্বাবধানে অথবা প্রোভাইডার কর্তৃক নিয়োগকৃত প্রতিনিধির মাধ্যমে এ-ধরনের হিসাব খুলতে হবে। গ্রাহকের ঝুঁকি অনুসারে সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা পেশাজীবি সমিতি প্রদত্ত গ্রাহকের পেশার সত্যায়ন গ্রহণ করতে হবে। এমএফএস এজেন্ট পয়েন্টের মাধ্যমে এ হিসাব খোলা যাবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button