ডিজিটাল বিপ্লব এবং বাংলাদেশের অর্থনীতি
দীপক কুমার আঢ্যঃ ডিজিটাল বিপ্লব এবং বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন বহুল আলোচিত বিষয় যে, সারা বিশ্বের প্রচলিত অর্থনীতিকে ডিজিটাল অর্থনীতিতে রূপান্তর করতে হবে। ডিজিটাল বিপ্লব, শিল্প বিপ্লব, সৃজনশীল অর্থনীতি ইত্যাদি যে নামেই ডাকি না কেন, বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম যাই বলুক, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দুনিয়াকে ঘোষণা দিয়ে সবার আগে আমাদের পথচলা শুরু করেছেন।
২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণার পর আমরা আমাদের দেশটাকে ডিজিটাল করার চেষ্টা করছি। বিশ্বজুড়ে এখন এই বিষয়টি সর্বোচ্চ আলোচ্য বিষয় হয়েছে। সম্প্রতি বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামেও ডিজিটাল অর্থনীতি আলোচিত হয়েছে। মোড়ল সংগঠনগুলো এখন অনুভব করছে যে, দুনিয়া চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের পথে হাঁটছে। ডিজিটাল প্রযুক্তি সেই বিপ্লবের হাতিয়ার এবং সারা দুনিয়াতেই ডিজিটাল অর্থনীতি এখন চূড়ান্ত রূপ নিচ্ছে।
আরও পড়ুন:
◾ বাংলাদেশের অর্জন: অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ
ডিজিটাল অর্থনীতি বলতে কী বোঝায় এটি আগে পরিষ্কার করে বুঝতে হবে। এই বিষয়ে অনেকেরই ভুল ধারণা আছে। ডিজিটাল অর্থনীতি যদি বোঝায় বাংলাদেশ ব্যাংক ডিজিটাইজড হয়ে গেছে; ব্যাংকগুলো ডিজিটাইজড সেবা দিচ্ছে; মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রামে-গঞ্জে সাধারণ মানুষের কাছে টাকা পৌঁছে যাচ্ছে; এটিএম ব্যবহার করে টাকা তোলা যাচ্ছে; এ ধরনের কার্যক্রম, তাহলে বলার কিছু নেই। এগুলো হচ্ছে ডিজিটাল অর্থনীতির এক ধরনের প্রদর্শন।
ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন। |
ডিজিটাল অর্থনীতি বুঝতে হলে আমাদের অর্থনীতির রূপান্তর সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে। এক সময় আমাদের এই পৃথিবীর সব দেশই ছিল কৃষিভিত্তিক। তারপর কৃষিভিত্তিক সমাজ ভেঙে হল শিল্পভিত্তিক সমাজ। শিল্পভিত্তিক সমাজ থেকে সেবা ও তথ্য প্রযুক্তিভিত্তিক অর্থনীতির বিকাশ হল। উৎপাদনশীলতার কারণে সমাজ ব্যবস্থায়ও পরিবর্তন এসেছে। প্রথমে যন্ত্র, তার পরে বিদ্যুৎ এবং তারও পরে ইন্টারনেট উৎপাদন ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করেছে। এরপর উৎপাদন ব্যবস্থায় আসছে ডিজিটাল প্রযুক্তি।
ডিজিটাল অর্থনীতি হচ্ছে মেধাভিত্তিক উৎপাদনশীল একটি অর্থনীতি যার ভিত্তি হচ্ছে ডিজিটাল প্রযুক্তি। কৃষি, শিল্প-বাণিজ্য, সেবা খাতকে বাদ দিয়ে কাগজে-কলমে তথ্য প্রযুক্তিভিত্তিক সমাজের দিকে এগিয়ে যাওয়ার নাম ডিজিটাল অর্থনীতি নয়। ডিজিটাল অর্থনীতি হচ্ছে ডিজিটাল প্রযুক্তিতে গড়ে তোলা মেধাভিত্তিক উৎপাদনশীল অর্থনীতি। কেউ কেউ একে সৃজনশীল অর্থনীতিও বলেন।
ডিজিটাল অর্থনীতি গড়ে তুলতে হলে আমাদের প্রথমে মেধাভিত্তিক মানবসম্পদ পেতে হবে যারা প্রয়োজনীয় ডিজিটাল টুলস বা প্রযুক্তি বা উপকরণ ব্যবহার করে বেশি মূল্য সংযোজন করতে পারে। একটি গাড়ি তৈরি করতে প্রয়োজন হয় লোহার। লোহার দাম সারা বিশ্বে প্রায় একই। এই লোহা দিয়ে টয়োটা, মার্সিডিজ, লেক্সাস ব্র্যান্ডের গাড়ি তৈরির সময় প্রযুক্তিগত জ্ঞান লোহার মূল্য সংযোজন বহু গুণ বৃদ্ধি করে। এটাই হচ্ছে মেধাবী মানবসম্পদের কাজ। এ সব গাড়িতে ব্যবহৃত লোহার মূল্যের সঙ্গে যদি মেধার মূল্য সংযোজন তুলনা করেন তাহলে মেধার মূল্য অনুভব করতে পারবেন।
যে দেশে মেধাবী মানবসম্পদ রয়েছে তারাই অর্থনীতিকে এখন ডিজিটাল করতে সক্ষম হচ্ছে। আমাদের অর্থনীতিতে এক সময় কৃষির অবদান ছিল ৮০ শতাংশ। অথচ তখন ছিল খাদ্য ঘাটতির দেশ। এখন আমাদের অর্থনীতিতে কৃষির অবদান নেমে হয়েছে মাত্র ১৯ শতাংশে। তারপরও বাংলাদেশ এখন খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশে পরিণত হয়েছে। এই যে মেধা ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে কৃষি উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে, এটাই হচ্ছে ডিজিটাল অর্থনীতির প্রাথমিক রূপ। এরপর আমরা কৃষিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিক্স, আইওটি ইত্যাদি প্রযুক্তি ব্যবহার করব এবং কৃষি অর্থনীতিকেই একটি নতুন মাত্রায় উন্নীত করব। আমেরিকার অর্থনীতিতে ৩৭ ভাগ অবদান রাখছে মেধাভিত্তিক সম্পদ।
চীন, ভারত এখন মেধাভিত্তিক সম্পদ গড়ে তোলার জন্য জাতীয় পর্যায়ে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বর্তমান বিশ্বের অর্থনীতিতে বস্তুগত সম্পদের চেয়ে মেধাসম্পদ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমাদের অর্থনীতির প্রতিটি খাতের জন্য মেধাভিত্তিক মানবসম্পদ গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই ডিজিটাল অর্থনীতি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। সেইসাথে আমাদের ব্যাংকিং সেক্টরগুলোকে আরও আধূনিক এবং যুগোপযুগি ব্যাংকিং সেবা চালু করতে হবে। গ্রাহক যেন আরও উন্নত এবং দ্রুত সেবা পায় সেদিকে আমাদের রাষ্ট্রয়াত্ত ব্যাংকগুলোকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে। তবেই ডিজিটাল অর্থনীতির সুফল পাওয়া সম্ভব।
সুতরাং আমাদের সকলকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেজ্ঞ মোকবেলায় ডিজটাল অর্থনীতির সাথে চলার মত সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। নতুবা আমাদের কোন উন্নয়ন কাজে আসবে না।
লেখকঃ দীপক কুমার আঢ্য, সিনিয়র অফিসার, জনতা ব্যাংক লিমিটেড।