আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ইসলামী ব্যাংক
আশরাফুল ইসলামঃ দেশের শিল্পায়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, আর্থ সামাজিক উন্নয়নে বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান যে ভূমিকা রাখতে পারে তা ৮০ দশকের আগে কল্পনাও করা যেত না। কিন্তু এ কল্পনাকে বাস্তবে রূপ দিতে দেশে প্রথমবারের মতো প্রতিষ্ঠিত হয় নতুন একটি ধারার ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। শুরুটা হয়েছিল ১৯৮৩ সালে। যার অনুসরণ করে আজ তিন ডজন পূর্ণাঙ্গ ও আংশিক ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠা হয়েছে। এর মধ্যে ১০টি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংক, ১১টি প্রচলিত ব্যাংকের সাথে ইসলামী ব্যাংকের শাখা এবং ১৪টি ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকিং উইনডোর মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংকিং প্রসার ঘটিয়েছে।
হ্যাঁ, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের কথাই বলছি। এ ব্যাংকটির লোকবল এখন দেশে কার্যত তিন ডজন ইসলামী ও আংশিক ইসলামী ব্যাংকের নেতৃত্ব দিচ্ছেন কখনো সামনের দিকে থেকে, কখনো বা পরামর্শ দিয়ে, কখনো বা উৎসাহ দিয়ে। আর ব্যাংকটি একাই সর্বোচ্চ পর্যায়ে শিল্পে বিনিয়োগ করেছে, সবচেয়ে বেশি আমদানি-রফতানি বাণিজ্য পরিচালনা করছে। কৃষিতে সর্বোচ্চ অবদান রয়েছে এই ব্যাংকের। এসএমইতে বিনিয়োগ এবং রেমিট্যান্স আহরণে শীর্ষে থেকে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে এই ব্যাংকটি।
দেশের ব্যাংকিং খাতের মধ্যে ইসলামী ব্যাংকিং সিস্টেমের অবদান দিন দিন বেড়ে চলছে। বাংলাদেশ ব্যাংক যে পরিসংখ্যান দিয়েছে, তাতে দেখা যায়, গত সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে দেশের ব্যাংক খাতে ১৫ লাখ ৭২৩ কোটি টাকার আমানতের মধ্যে ইসলামী ব্যাংকিং সিস্টেমেই রয়েছে চার লাখ ২১ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা, যা এই খাতের মোট আমানতের ২৬.৮০ শতাংশ। আর ব্যাংক খাতের মোট বিনিয়োগের প্রায় ২৯ শতাংশ রয়েছে ইসলামী ব্যাংকগুলোর। ১৩ লাখ ৩২৯ কোটি টাকার বিনিয়োগের মধ্যে ইসলামী ব্যাংকগুলোরই রয়েছে ৩ লাখ ৮৬ হাজার ২২১ কোটি টাকা। রেমিট্যান্সেরও ৩৭.৬৩ শতাংশ আসে ইসলামী ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে।
আবার ইসলামী ব্যাংকগুলোর মধ্যে আমানতের অবস্থানের দিকে তাকালে দেখা যায়, গত সেপ্টেম্বরে ইসলামী ব্যাংকিং সিস্টেমে মোট আমানতের মধ্যে এক তৃতীয়াংশের বেশি গ্রাহক আমানত রেখেছেন ইসলামী ব্যাংকে। যেমন, ৪ লাখ ২১ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকার আমানতের মধ্যে ৩৬.২০ শতাংশই ইসলামী ব্যাংকের, যা টাকার অংকে ১ লাখ ৫২ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকা। আমানতের পাশাপাশি বিনিয়োগের দিক থেকেও ব্যাংকটি শীর্ষে অবস্থান করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ইসলামী ব্যাংকিং সিস্টেমের ৩ লাখ ৮৬ হাজার ২২১ কোটি টাকার আমানতের মধ্যে ৩৫.৬৩ শতাংশই ইসলামী ব্যাংকের, যা টাকার অংকে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন সম্প্রতি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন। |
এদিকে রেমিট্যান্স আহরণের দিক থেকে বরাবরই শীর্ষে থাকে ইসলামী ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ইসলামী ব্যাংকগুলোর মধ্যে রেমিট্যান্স আহরণের দিক থেকে ইসলামী ব্যাংক একাই আহরণ করেছে প্রায় ৫৬ শতাংশ। গত জুলাই-সেপ্টেম্বরে ২০ হাজার ২২৩ টাকার রেমিট্যান্সের মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১১ হাজার ৩০৪ কোটি টাকা।
শুরুর দিকে ম্যানুয়ালি হিসাব-নিকাশ সম্পন্ন করা হতো ব্যাংকে। তখন আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া ছিল না কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু দিন বদলের সাথে সাথে আধুনিক প্রযুক্তির সমাবেশ ঘটেছে দেশের ব্যাংক খাতে। আর এ আধুনিক প্রযুক্তি থেকে পিছিয়ে নেই দেশের ইসলামী ব্যাংকগুলো। বরং সেদিক থেকে ইসলামী ব্যাংকগুলোতেই সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সমারোহ দেখা যায়। ইসলামী ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, প্রায় ২ কোটি গ্রাহকের আস্থার ব্যাংক হিসেবে ইসলামী ব্যাংক দেশব্যাপী সাড়ে ৬ হাজার ইউনিটের মাধ্যমে তাদের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যাংকিং সেবা দিয়ে আসছে। সর্বোচ্চ আমানত নিয়ে এখন ইসলামী ব্যাংক দেশের শীর্ষে অবস্থান করছে।
রেমিট্যান্সের দিকে তাকালেও দেখা যাবে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসে। ব্যাংকভিত্তিক রেমিট্যান্স প্রবাহের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, গেল বছর ব্যাংকটি রেমিট্যান্স আহরণ করেছে প্রায় পৌনে ৫ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে গত ডিসেম্বরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণ করেছে ৫০ কোটি মার্কিন ডলার, যা দেশের মোট রেমিট্যান্সের ৩০ শতাংশ।
বৈদেশিক বাণিজ্যেও শীর্ষে অবস্থান করছে এ ব্যাংকটি। এক পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত বছর ৪ বিলিয়ন ডলারের ওপর (৪০৩ কোটি ডলার) ব্যাংকটির মাধ্যমে রফতানি আয় হয়। আর আমদানি বাণিজ্যেও শীর্ষে অবস্থান করছে এ ব্যাংকটি। গেল বছরব্যাপী ডলার সঙ্কট ছিল। এর পরেও ব্যাংকটি জাতীয় অগ্রাধিকারভুক্ত সার আমদানিতে সর্বোচ্চ বিনিয়োগ করেছে। ২০২২ সালে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে ৭৩ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের সার আমদানি হয়েছে যা দেশের বেসরকারি খাতে আমদানির ৬৫ শতাংশ। এর ফলে দেশের কৃষি খাত এগিয়ে যাচ্ছে, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশ এগিয়ে চলছে সমৃদ্ধির পথে।
শিল্পায়নের দিকে তাকালে দেখা যায়, শুরু থেকেই উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে ইসলামী ব্যাংক। উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও তহবিল জোগানের মাধ্যমে সবধরনের শিল্প কারখানায় অবদান রাখছে ব্যাংকটি। তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রেও অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে ইসলামী ব্যাংকের। হালকা ও ভারী সব ধরনের শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানিতে সর্বোচ্চ বিনিয়োগ করেছে এ ব্যাংক। শিল্পে বিনিয়োগের মাধ্যমে ৮৫ লাখ মানুষের সরাসরি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে বলে ইসলামী ব্যাংক জানিয়েছে। শুধু হালকা ও ভারী শিল্পেই নয়, ইসলামী ব্যাংক সর্বোচ্চ এসএমই বিনিয়োগকারী ব্যাংক। এ ব্যাংকের অর্থায়নে ৬ হাজারের বেশি শিল্প কারখানা পরিচালিত হচ্ছে। আর আবাসন খাতে বিনিয়োগের দিক থেকেও সবার আগে রয়েছে ব্যাংকটি। এ পর্যন্ত ৪ লাখ পরিবারকে আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জাহাজ নির্মাণসহ দেশের আকাশ, স্থল এবং নৌপরিবহন খাতে ইসলামী ব্যাংকের রয়েছে সর্বোচ্চ বিনিয়োগ রয়েছে। দারিদ্র্য দূরীকরণ ও নারীর ক্ষমতায়নে ৩০ হাজার গ্রামের ১৫ লক্ষাধিক প্রান্তিক পরিবারের মাঝে ক্ষুদ্র বিনিয়োগ প্রদান করেছে এ ব্যাংক। যার সদস্যদের ৯৪ শতাংশই নারি। ইসলামী ব্যাংক সর্বোচ্চ কর প্রদানকারী ব্যাংক। এক যুগ ধরে বিশ্বসেরা ১ হাজার ব্যাংকের তালিকায় বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক। সম্প্রতি এ ব্যাংক বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী ইসলামী রিটেইল ব্যাংক এবং বাংলাদেশরে সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যাংক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
এভাবেই আস্থা ও নির্ভরতার প্রতীক হয়ে ইসলামী ব্যাংক দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আর সম্মিলিত শক্তিতে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রা।
সোর্সঃ নয়া দিগন্ত