ব্যাংকিং খাত: ইসলামী ব্যাংকের আস্থা নষ্ট করাই আসল উদ্দেশ্য!
ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমঃ বিশ্বব্যাপী ইসলামী ব্যাংকিং সিস্টেম চালু হয়েছে সুদের হাত থেকে জাতিকে রক্ষা করার আন্দোলনের অংশ হিসেবে। ১৯৮৩ সালে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রথম শরীয়াহভিত্তিক ব্যাংক হিসেবে যাত্রা শুরু করে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। এতে দেশী-বিদেশী অংশীদারদের বিনিয়োগ থাকলেও ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালনায় যারা ছিলেন তারা শুধুমাত্র মুনাফা অর্জনের জন্য এটিকে প্রতিষ্ঠা করেননি। মূলত প্রতিষ্ঠার দুটি উদ্দেশ্য। প্রথমত, শরীয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি সূদমুক্ত অর্থব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। দ্বিতীয়ত, সূদমুক্ত অর্থনীতির মাধ্যমে একটি ইনসাফভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণ।
আল্লাহ ক্রয়-বিক্রয় হালাল করেছেন আর সুদকে হারাম করেছেন।’ (২:২৭৫) রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে সুদ খায়, যে সুদ খাওয়ায়, যে সাক্ষী থাকে এবং যে ব্যক্তি সুদের হিসাব-নিকাশ বা সুদের চুক্তিপত্র ইত্যাদি লিখে দেয় সবার প্রতি লানত।’ (তিরমিজি-১২০৬)
সুতরাং এই ব্যাংক প্রতিষ্ঠাকাল হতে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে নিজেদের শ্রম ও মেধার সর্বোচ্চ ব্যবহার করে জনগণকে সার্বিক সেবা প্রদান করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। ফলে তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশের মধ্যে পরিচালিত হওয়া সত্ত্বেও ক্রমে এটি অন্যান্য সকল ব্যাংক হতে প্রথম সারিতে উঠে আসে। বিশেষ করে এতে সূদের পরিবর্তে বিনিয়োগের ইসলামী বিকল্পগুলোর ব্যবহার, সরাসরি তত্ত্বাবধান, জনযোগাযোগের আন্তরিকতা, কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটিগুলোর কারণে এর গ্রাহক সংখ্যা অন্যান্য সবগুলো ব্যাংক হতে বেশি।
গুগলে যদি সার্চ করা হয় “হুইচ ওয়ান ইজ দ্য মোস্ট প্রোফিটেবল ব্যাংক অব বাংলাদেশ?” আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও ওয়েবসাইটগুলোর তথ্য অনুযায়ী এই তালিকায় প্রথমে আছে ‘ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড’ এর নাম। বার্ষিক নেট মুনাফা, গ্রাহক সংখ্যা এবং গ্রাহক সেবায় সবচেয়ে নিবেদিতপ্রাণ হওয়ায় এই ব্যাংকটি এশিয়ার মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করতে সক্ষম হয়েছে।
ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন। |
২৯ জুন ২০২২ তারিখে প্রকাশিত একটি (Top Ten Commercials Banks) নিবন্ধের তথ্য অনুযায়ী গ্রাহক সংখ্যা, সেবা, অন্যান্য অনেকগুলো কারণে এই ব্যাংকটি ১ নম্বরে স্থান পেয়েছে। গ্রাহকদের আস্থার জায়গা হওয়ার কারণে ২০২০ সালে এই ব্যাংক ১ ট্রিলিয়ন ডলার ডিপোজিটের সীমা স্পর্শ করে। এই ব্যাংকের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি যা বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় একদশমাংশের কাছাকাছি। তাছাড়া ইসলামী ব্যাংক দেশের অর্থনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার কারণ হলো বাংলাদেশের মোট বিদেশী রেমিট্যান্স এর ৩২শতাংশ এই ব্যাংকের মাধ্যমে যুক্ত হয় (বিজিনেস ইনস্পেকশন ডট কম)।
ফাইনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের তথ্য অনুযায়ী ২০২১ সালে ইসলামী ব্যাংকের বার্ষিক মুনাফা বেড়ে ২৩.৫০ বিলিয়ন ডলার হতে ২৪.৩০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়। যার কাছাকাছি থাকা পূবালী ব্যাংকের বার্ষিক মুনাফা ছিলো ১১.৪০ বিলিয়ন ডলার (ডেইলি স্টার)।
বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসীরা ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। ২০২১ সালে ইসলামী ব্যাংক প্রবাসীদের পাঠানো ৫০ হাজার ৫১৮ কোটি টাকার রেমিট্যান্স দেশে এনেছে, আমদানি হয়েছে ৬৪ হাজার ৫৩০ কোটি টাকার পণ্য, দেশ থেকে ৩০ হাজার ১৭৮ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি হয়েছে ব্যাংকটির মাধ্যমে।
ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে মানবিক, সামাজিক ও কল্যাণকর কাজের ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটেছে। আর্থিক সেবার বাইরে ইসলামী ব্যাংক সারাদেশে শিক্ষা, গৃহায়ন, পুনর্বাসন, সামাজিক সুরক্ষা, নারী উন্নয়ন, স্বাস্থ্য প্রভৃতি প্রকল্পে কোটি কোটি মানুষের প্রাণের প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিণত হয়েছে। ইসলামী ব্যাংক স্কুল, কলেজ, মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, নার্সিং ইনস্টিটিউট, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, চাইল্ড কেয়ার, মক্তব, ক্ষুদ্রঋণ, পল্লী উন্নয়ন, শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষকে সেবা প্রদান করছে।
ইসলামী ব্যাংকিং এর ধারণা বাস্তবায়ন ব্যাপক সফলতা পাওয়ায় ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশকে অনুসরণ করে কমপক্ষে আরো ১০টি ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশে। অনেকগুলো প্রচলিত ব্যাংক গ্রাহক সংগ্রহের জন্য তাদের ইসলামী ব্যাংকিং শাখা চালু করেছে। এসব ইসলামী ব্যাংকেরই সাফল্য। (চলবে)
সোর্সঃ সংগ্রাম