ব্যাংকারদের পক্ষ থেকে আইবিবির লাগাম টেনে ধরবে কে?
হাসান সিদ্দিকী সানিঃ ব্যাংকারদের পক্ষ থেকে আইবিবির লাগাম টেনে ধরবে কে? সময় এসেছে, ইনস্টিটিউট অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (আইবিবি) কতৃপক্ষের সাথে আমাদের পক্ষ থেকে কথা বলবার! দফায় দফায় অস্বাভাবিক হারে পরীক্ষার ফি বাড়ানো! সকল প্রশ্নের উত্তর সঠিকভাবে লেখার পরও অকৃতকার্য দেখানো! আবার মাত্র দুটি প্রশ্নের উত্তর দিয়েই কৃতকার্য হয়ে যাওয়া! এ যেনো আমাদের ভাগ্য নিয়ে এক জুয়ার আসরে বসা!
মাষ্টার্স পাশ করে নিয়োগ পরীক্ষা দিয়ে চাকরী পেয়ে আবার কেনো ডিপ্লোমার মাধ্যমে ব্যাংকারদের যোগ্যতার প্রমান দিতে হবে? ডিপ্লোমা পরীক্ষা যেই প্রতিষ্ঠান নিচ্ছেন, তারা কি তাদের কোনো শিক্ষক দিয়ে পরীক্ষার্থীদের ব্যাংকিং বিষয়ে পড়াশুনা করিয়েছেন, যে বছরে দুইবার পরীক্ষা নিতে আসবেন? আর ডিপ্লোমা ডিগ্রী যদি ব্যাংকে খুব প্রয়োজনই হয়, তাহলে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বলে দিন, ব্যাংকে চাকরী প্রত্যাশীদের মাষ্টার্স ডিগ্রীর সাথে ডিপ্লোমাও বাধ্যতামূলক! চাকরীর পরে কেনো ডিপ্লোমার ফাঁদ!
হয়তো বলবেন, অনেকেই আরবী, ফার্সি, পালি বা নাট্যকলায় পড়ে এখন ব্যাংকে চাকরী করছে! তাই ডিপ্লোমা পরীক্ষা দিলে সহজে পাস করেনা, কিন্তু আমরা যারা ফিনান্স, একাউন্টিং, ম্যানেজমেন্ট বা মার্কেটিং নিয়ে পড়াশুনা করে এসেছি, তাদের কথা কি বলবেন? তারাও কেনো বছরের পর বছর ফেল করে চলেছি! এর উত্তর কি দেবে আইবিবি? নাকি পৃথিবীর সর্বোচ্চ মেধাবীরা সব আইবিবিতে এসে বসে আছেন?
আমরা সারা দিন কর্মক্ষেত্র ও সাংসারিক ঘানি টেনে ডিপ্লোমার প্রস্তুতি নেবো কখন? আমরা যারা শাখা পর্যায়ে আছি, তারা শুক্র, শনিবার বন্ধের দিনও সকল সামাজিক আচার অনুষ্ঠান বাদ দিয়ে, পরিবার পরিজনকে সময় না দিয়ে ব্যাংকের কাজ করি! প্রফেশনকে নিজের জীবনের অধিকাংশ মূল্যবান সময়টুকু দেয়ার পরও কেনো ব্যাংকিং ডিপ্লোমার বেরী পায়ে দিয়ে আমাদের আটকে রাখা হবে? আর এতো কষ্ট করেও যদি আমাদের ডিপ্লোমা পরীক্ষা দিতেই হয় তাহলে আইবিবির কার্যক্রমও সচ্ছ হওয়া উচিৎ এবং জবাবদিহিতার আওতায় এসে ব্যাংকারদের কিছু বিষয়ে পরিষ্কার ধারনা দেওয়া উচিৎ!
ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন। |
আইবিবি যখন আমাদের পরীক্ষার ফি বাড়ায়, তখন কাদের সাথে আলোচনা করে? সাধারন ব্যাংকাররা কি এ ব্যাপারে কিছু জানতে পারে? এটাতো হুট করে চাপিয়ে দেয়া একটি বিষয়! এটাতো এক ধরনের জুলুম! সঠিকভাবে সব উত্তর লিখেও ফেইল! বছরের পর বছর পরীক্ষার ফি দিয়ে পরীক্ষা হলে ফেইল করা সাবজেক্ট নিয়ে বসা! এটা কি আসলেই অকৃতকার্যতা নাকি কারো ব্যবসার মাধ্যম? এভাবে আর কত দিন চলবে?
এবার আসি পরীক্ষার হলের কথায়! হলে প্রায়ই ব্যাংকারদের লাঞ্ছিত, অপমানিত করা হয়! ষষ্ঠ গ্রেডের পরীক্ষার্থী কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করে হলের দায়িত্বে থাকা সদ্য যোগদানকৃত নবম গ্রেডের একজন কর্মকর্তা! সামাজিক সম্মান ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হবার ভয়ে এসব বিষয়ে নিরবে পাশ কাটিয়ে যান পরীক্ষার্থীরা! অবলা, অসহায় ব্যাংকার! আহারে! দেখার যেনো কেউ নাই! নিরীহ ব্যাংকার বা পেশাজীবীদের পরীক্ষার হলে পুলিশ থাকবে কেনো? প্রশাসনের কর্তারা ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার নিয়ে হলের ভেতর ব্যাংকারদের সাথে বাজে আচরন করবে কেনো? ব্যাংকাররা কি সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করতে কেন্দ্রে যায়, নাকি শান্তিপূর্ণ ভাবে পরীক্ষা দিতে যায়? এটা ব্যাংকারদের জন্য সত্যি অপমানের! এ দায় কি আইবিবি এড়াতে পারে?
ইদানিং পরীক্ষার হলগুলোতে ব্যাংকারদের সার্চ করার নামে যেভাবে শরীরের বিভিন্ন স্থানে হাত দেয়া হয়, সত্যি তা আপত্তিকর! একজন পেশাজীবী আরেকজন পেশাজীবীকে এভাবে অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে ফেলবেন, তা কি কোনো অবস্থাতেই আশা করা যায়? প্রতিবাদ করতে গেলে সমন জারি হয়ে যাবে! ব্যাংকার হিসাবে সত্যি আমরা বড় অসহায়! মাঝে মাঝে ভাবি, আসলে আমাদের অভিভাবক কারা? কার কাছে গেলে এর প্রতিকার পাবো? আমাদের কষ্টগুলো আমলে নেবে কে?
আর পদোন্নতির ক্ষেত্রে অনেক প্রতিষ্ঠানই ব্যাংকিং ডিপ্লোমাকে যোগ্যতার মাপকাঠি হিসাবে বিবেচনা করছেন, আবার অনেকেই করছেন না। আর যেই প্রতিষ্ঠানগুলো আইবিবির স্বেচ্ছাচারী ফর্মূলার ডিপ্লোমাকে পাশ কাটিয়েই পদোন্নতি দিচ্ছেন, সত্যিকার অর্থে তারাই ভালো আছেন। কারন তাদের কর্মীরা হতাশায় নেই! কর্মী সন্তুষ্টি নিয়েই প্রতিষ্ঠান গুলো এগিয়ে যাচ্ছে…..
পরিশেষে বলতে চাই, বছরে দুইবার নিজের জন্য ব্যাংকিং ডিপ্লোমা নামক বিষাক্ত দুধ কেনায় শিশু সন্তানের দুধের কৌটা কিনতে গিয়ে বেশ হিমশিম খাচ্ছি! সমাজে ব্যাংকারদের সম্মান আছে, কিন্তু এক্সট্রা উপড়ি নাই….
সব হয় সৎ পথে উপার্জিত গোনা টাকায়! আর সেই ব্যাংকারদের সম্মান বাঁচাতেই ব্যাংকার অভিভাবকরা এগিয়ে আসবেন এমনটাই প্রত্যাশা করি! আমি/ আমরা আরো প্রত্যাশা করি, উপরের আলোচিত বিষয়গুলোতে সুদৃষ্টি দিয়ে আইবিবি আমাদের ব্যাংকারদের সাথে মানবিক আচরন করবে!
আরও দেখুন:
◾ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (আইবিবি)
(বিঃদ্রঃ কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে হেয় করবার উদ্দেশ্য কথাগুলো নয়, অবহেলিত ও নিরীহ ব্যাংকার সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে আমার এ মত প্রকাশ….)
লেখকঃ হাসান সিদ্দিকী সানি, অগ্রণী ব্যাংক পরিবার