জনশক্তি রপ্তানিতে বড় বাধা মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম
মোঃ জিল্লুর রহমানঃ বাংলাদেশ থেকে মধ্যস্বত্বভোগী চক্রের (সোজা ভাষায় দালাল) মাধ্যমে বিদেশে বিপুলসংখ্যক অদক্ষ কর্মী যাওয়ার ফলে শুধু প্রবাসীর সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু শ্রম অনুযায়ী রেমিট্যান্স বাড়ছে না। এই অদক্ষ কর্মীরা বেশির ভাগই গ্রামের দরিদ্র ও নিম্ন মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠী থেকে আসা। তাদের নানাভাবে প্রলোভনে ফেলে মধ্যস্বত্বভোগীরা হাতিয়ে নিচ্ছে বড় অংকের টাকা।জমি জমা বিক্রয় করে, সারা জীবনের পুজ্ঞিত সঞ্চয় তুলে দেয় দালালদের হাতে। তারা বিদেশে হাড় ভাঙ্গা খাটুনি খেটেও যে টাকায় বিদেশ যায় সেই টাকাই তুলতে পারে না। আন্তর্জাতিক মানদন্ডে বাংলাদেশের কর্মীদের মান অনেক নিচে। এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে না পারলে লাখ লাখ কর্মী বিদেশ গেলেও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়বে না।
মূলত বাংলাদেশ থেকে বিদেশে সিংহভাগ কর্মী যায় বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সি বা তাদের মনোনীত দালালের মাধ্যমে। দালালরা অভিবাসন প্রক্রিয়ার তৃণমূল পর্যায়ে অবস্থান করায় বিদেশ গমনেচ্ছুরা তাদের ওপর অনেকটা নির্ভর করে। তাদের কারণেই অভিবাসন ব্যয় ক্রমাগত বাড়ছে। শুধু এ দেশে নয়, গন্তব্য দেশটিতেও একটি শক্তিশালী মধ্যস্বত্বভোগী চক্র গড়ে উঠেছে। তাদের বিরুদ্ধে সরকারি পর্যায়ে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। জনশক্তি এজেন্সিগুলোর জেলা পর্যায়ে অফিস না থাকায় এবং বিদেশ গমনেচ্ছুদের সিংহভাগ স্বল্প শিক্ষিত হওয়ায় তাদের ঠকানো দালালদের পক্ষে সহজ হয়ে দাঁড়ায়। জনশক্তি রপ্তানি খাতে স্বচ্ছতা আনতে দালালদের হয় বৈধ করতে হবে, নতুবা এ খাতে তারা যাতে কোনো ভূমিকা রাখতে না পারে তা নিশ্চিত করা জরুরি।
দালাল নির্ভরতার কারণে জনশক্তি রপ্তানি খাতের সুনাম দেশে ও প্রবাসে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছে। জনশক্তি রপ্তানি প্রক্রিয়ায় লোক সংগ্রহের সিংহভাগই সম্পন্ন হয় দালালদের মাধ্যমে। রিক্রুটিং এজেন্সির নামধাম না জেনেও অনেকে দালালের হাতে তুলে দেয় টাকা। দালালরাই পাসপোর্ট বানিয়ে দেয়, তাদের মাধ্যমে মেডিকেল টেস্টও সম্পন্ন হয়, বিমানের টিকিট সংগ্রহ করা হয়। দালাল নির্ভরতার কারণে বিদেশে যেতে বাংলাদেশের কর্মীদের অন্য দেশের কর্মীদের চেয়ে ৪ থেকে ৫ গুণ বেশি খরচ হয়। জনশক্তি রপ্তানিতে দালালরাই শেষ কথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দালাল চক্র বিদেশেও বড় ধরনের ফাঁদ পেতে রেখেছে।
জাতিসংঘের সহযোগী প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) বাংলাদেশ কার্যালয়ের এক গবেষণার তথ্য মতে, বেসরকারি খাতে বিদেশে বাংলাদেশের গড় অভিবাসন ব্যয় ৩ লাখ টাকার ওপরে। এ খরচ ভারত, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়ার চেয়ে চার-পাঁচ গুণ এবং পূর্ব ও পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোর তুলনায় সাত গুণ বেশি। উক্ত তথ্য মতে, কুয়েত যেতে শ্রীলঙ্কায় একজন অভিবাসী ব্যক্তির গড়ে ২৭ হাজার টাকার মতো লাগে, ভারতে লাগে লাখ খানেক টাকা। আর বাংলাদেশে লাগে আড়াই লাখ টাকার বেশি। যদিও সরকার-নির্ধারিত খরচ ১ লাখ টাকার সামান্য কিছু বেশি। অন্যদিকে, বাংলাদেশি অভিবাসীরা গড়ে প্রবাসে মাসে ১৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করে। তাতে প্রবাস গমনের খরচ একেবারেই পোষায় না। জাতিসংঘ-ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অনুসারে, কর্মীর অভিবাসন ব্যয় তাঁর বার্ষিক মোট আয়ের ১০ শতাংশের বেশি হবে না। অর্থাৎ কেউ যদি মাসে ২৫ হাজার টাকা হিসাবে বছরে ৩ লাখ টাকা আয় করেন, তাঁর অভিবাসন ব্যয় ৩০ হাজার টাকার মধ্যে থাকতে হবে। কুয়েতে যেতে সরকার-নির্ধারিত খরচই এর পাঁচ গুণ। প্রকৃতপক্ষে খরচ হয় ১০ গুণের বেশি। মালয়েশিয়া যেতে সরকার-নির্ধারিত অভিবাসন ব্যয় সর্বোচ্চ ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। অথচ বেসরকারি খাতে একজন অভিবাসীর ব্যয় হচ্ছে সাড়ে তিন থেকে চার লাখ টাকা। মাত্র ১০টি এজেন্সির মাধ্যমে কর্মীরা মালয়েশিয়া গিয়েছে। এত অল্প এজেন্সি থাকার পরও ব্যয় নিয়ন্ত্রণে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। কাউকে শাস্তিও দেওয়া হয়নি।
ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন। |
তবে, দক্ষতা না থাকায় বাংলাদেশের কর্মীদের আয় কম। গত ৪২ বছরে সর্বমোট অভিবাসী কর্মীর প্রায় অর্ধেকই অদক্ষ কর্মী। এক-তৃতীয়াংশ দক্ষ কর্মী। বাদ বাকিদের বড় অংশ আধা দক্ষ। ছোট্ট একটি অংশ পেশাজীবী। তবে গত কয়েক বছর দক্ষ কর্মীর হার বেড়েছে। গত বছর যেমন তাঁরা ছিলেন ৪৩ শতাংশ। এখন দেশজুড়ে সরকারের ৭০টি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান আছে। মন্ত্রণালয়ের হিসাবে ২০১৮ সালে প্রায় ৭ লাখ লোক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তবে খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, এলোপাতাড়ি নয়, বিভিন্ন দেশের চাহিদা অনুযায়ী কাজের প্রশিক্ষণ দরকার। ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ও শ্রীলঙ্কা তেমনটাই করছে। আমাদেরও সে পথে অগ্রসর হওয়া দরকার।
বাংলাদেশ থেকে ২০১৭ সালে রেকর্ড সংখ্যক ১০,০৮,৫২৫ জন কর্মীর মধ্যে ৪,৩৪,০০০ দক্ষ শ্রমিক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অভিবাসী হয়েছিল। ২০১৮ সালে ৭,৩৪,১৮১ জন অভিবাসীর মধ্যে দক্ষ শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ৩,১৮,০০০। অন্যদিকে ২০১৯ সালে ৭,০০,১৫৯ জন অভিবাসীর মধ্যে দক্ষ শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ৩,০৪,০০০। স্বল্প দক্ষতাকে বিবেচনায় নিলে দেখা যায়, ২০১৭ সালে ৪ লাখ স্বল্প দক্ষ শ্রমিকের পরিবর্তে ২০১৮ সালে ২.৮৩ লাখ এবং ২০১৯ সালে ১.৯৭ লাখ স্বল্প দক্ষ শ্রমিকরা বিদেশে কাজের উদ্দেশ্যে গমন করেন। অন্যদিকে ২০১৭ সালে আধা-দক্ষ শ্রমিক প্রেরণ ১.৫৫ লাখ থেকে ২০১৮ সালে কমে ১.১৭ লাখ হয় এবং ২০১৯ সালে কিছুটা বেড়ে ১.৪২ লাখ হয়। ২০২০ সালে বাংলাদেশ থেকে বৈদেশিক কর্মসংস্থানে সাড়ে ৭ লাখ নতুন কর্মীকে যুক্ত করার লক্ষ্য থাকলেও করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে মাত্র ২,১৭,৬৬৯ জন কর্মীই প্রেরণ করা সম্ভব হয়। ফলে শ্রমশক্তির বিরাট একটি অংশ বৈদেশিক কর্মসংস্থানের সুযোগ হারায়। এর ওপর করোনা ভাইরাসের কারণে চাকরি হারিয়ে দেশে ফেরত এসেছেন প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মতান্তরে ৫ লাখেরও বেশি কর্মী যা বাংলাদেশের শ্রম অভিবাসনের ক্ষেত্রে বড় ক্ষতি।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) কিছুদিন আগে ৫৩টি দেশে জনশক্তি রপ্তানির সম্ভাবনা নিয়ে একটি গবেষণা করেছিল। তাতে দেখা যায় গত এক দশকে ৯৭টি দেশ থেকে বেড়ে শ্রমবাজার ১৬৮টি দেশে ছড়িয়েছে। তবে অধিকাংশ দেশেই কর্মী যাচ্ছে হাতে গোনা। সত্যিকার অর্থে নতুন শ্রমবাজার তৈরি হচ্ছে না। এক্ষেত্রে জনশক্তি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হয় দালালদের আইনের আওতায় নিয়ে নির্ধারিত কমিশন বা ফি প্রদানপূর্বক বৈধ করতে হবে, নয়তো থামাতে হবে। তাছাড়া, নতুন বাজারের চাহিদা বিচার করে দক্ষ কর্মী গড়তে হবে। দূতাবাসগুলোতে অভিবাসনে অভিজ্ঞ জনবল দিতে হবে। অভিবাসীর সংখ্যা নয়, গুণগত মান বাড়ানোয় গুরুত্ব দিতে হবে, তবেই রেমিট্যান্স বাড়বে এবং এটা দীর্ঘ মেয়াদে টেকসই হবে।
এ ছাড়া ভিসা কেনাবেচা বন্ধ করতে না পারলে অভিবাসন ব্যয় কমানো কঠিন হবে। দক্ষ কর্মী বাড়লে এটা সবচেয়ে কার্যকরভাবে বন্ধ করা যাবে। সাধারণত দক্ষ কর্মীর ভিসা টাকা দিয়ে কেনা যায় না। অভিবাসন নিয়ে কাজ করা রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট (রামরু) গবেষণা বলছে, ১৯ শতাংশ লোক টাকা দিয়েও বিদেশে যেতে পারছে না। এতে তাঁদের গড়ে আর্থিক ক্ষতি হয় প্রায় ২ লাখ টাকা। ৩২ শতাংশ অভিবাসী বিদেশে গিয়ে চাকরি না পাওয়াসহ নানা হয়রানির মুখে পড়ছেন। আর বাকি ৪৯ শতাংশ চাকরি পাচ্ছে। এসব হয়রানি ঠেকাতে দালাল বন্ধ করতে চায় সরকার কিন্তু দালাল দূর করা সম্ভব নয়। অভিবাসনের প্রতিটি ধাপে দালালের সহায়তা লাগে। তাই তাঁদের নিবন্ধনের ব্যবস্থা করে প্রতিটি কাজের জন্য দালালদের ফি নির্ধারণ করে দেওয়া যেতে পারে। যাঁরা অভিবাসনে আগ্রহী, তাঁরা পরিচিত দালালে আস্থা পান। জেলায় জেলায় আলাদা করে এজেন্সির কার্যালয় নেওয়ার সরকারি নির্দেশনাও বাস্তবসম্মত নয়। বরং এজেন্সিগুলোর সংগঠন বায়রা সব জেলায় কার্যালয় খুলতে পারে। সেখানে সব এজেন্সির কর্মীরা বসে কাজ করতে পারবে।
রামরুর সাম্প্রতিক এক তথ্য বলছে, বাংলাদেশে ২০২১ সালে অভিবাসন ব্যয় বেড়ে গেছে। বছরের শেষ প্রান্তে এসে বিমানভাড়া বেড়ে যাওয়ায় অভিবাসীদের কাজে যোগদান বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বিমান ভাড়া ৪০-৪৫ হাজার টাকা থেকে ৭০-৯০ হাজার টাকা করা হয়েছে। দুবাইয়ের বিমান ভাড়া আগে ছিল ২০০ মার্কিন ডলার, যা বর্তমানে বেড়ে হয়েছে প্রায় ৯০০ ডলার। একইভাবে সৌদি আরবের বিমান ভাড়া ৩০০ মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে ১২০০ মার্কিন ডলার হয়েছে। এ কারণে অনেক অভিবাসীকে উচ্চ খরচে অভিবাসন করতে হচ্ছে। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পাওয়া রামরু’র তথ্যানুযায়ী, বাহরাইন থেকে ছুটিতে আসা প্রায় দেড় হাজার অভিবাসী কর্মী নিজ কর্মস্থলে ফেরত যেতে পারছিল না। তাদের অনেকেই ১৮ মাস ধরে দেশে আটকা পড়ে আছে। আর তিন হাজার কর্মী ভিসা নবায়ন জটিলতা ও অন্যান্য সমস্যার কারণে সময়মতো বাহরাইনে কর্মস্থলে ফেরত যেতে পারেনি। তাদের একাংশ আবারও অর্থ ব্যয় করে মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশে কম বেতনে অভিবাসন করেছে।
জনশক্তি রপ্তানি খাতে প্রতারক-দালালদের দৌরাত্ম্য নির্মূল এবং বিদেশে অবস্থানরত শ্রমিকদের সমস্যা-সংকট দেখার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দেশে বাংলাদেশ দূতাবাস বা মিশনগুলোকে তৎপর করা- এ দুটি ব্যাপার নিশ্চিত করা গেলে জনশক্তি বাজার নিয়ে সংকট বহুলাংশে দূর হয়ে যাওয়ার কথা। এখনো দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিদেশ গমনেচ্ছু মানুষ দালালদের খপ্পরে পড়ে প্রয়োজনের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি টাকা গুনছেন, অনেকে সর্বস্ব খুয়াচ্ছেন। অন্যদিকে প্রবাসী শ্রমিকদের একটি প্রধান অভিযোগ হলো- তারা প্রয়োজনে বাংলাদেশ দূতাবাসের সহায়তা পান না। দূতাবাস বা বিদেশ মিশনগুলোর প্রধান কাজই হচ্ছে সে দেশে কর্মরত প্রবাসীদের সুবিধা-অসুবিধা দেখা। কর্মকর্তারা সক্রিয় থাকলে বিদেশে বাংলাদেশীদের কাজ নিয়ে, পাওনা আদায় নিয়ে, আইনি ব্যাপার নিয়ে এতোটা নাজুক অবস্থায় পড়ার কথা নয়। বাংলাদেশের মিশনগুলোকে আরো আন্তরিক ও দক্ষতার সঙ্গে সেবার মান বৃদ্ধি করা হলে এবং সরকারের নির্দেশনা যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হলে জনশক্তি রপ্তানি খাতের চিত্র অন্যরকম হতেই পারে। আমরা সে প্রত্যাশাই রাখি।
মোঃ জিল্লুর রহমান, ব্যাংক কর্মকর্তা ও ফ্রিল্যান্স লেখক।