এক্সাইজ ডিউটি বা আবগারি শুল্ক বিষয়ক আলোচনা

প্রণব চৌধুরীঃ এক্সাইজ ডিউটি বা আবগারি শুল্ক বিষয়ক আলোচনা- Excise Duty বা আবগারি শুল্ক নিয়ে অনেকেই প্রায়শই জানতে চান। বিশেষ করে ব্যাংকের ডিসেম্বর ক্লোজিং শেষ হবার পর যখন সরকার কর্তৃক আরোপিত এই ‘পরোক্ষ কর’টি গ্রাহকদের হিসাবে আরোপ করা হয় তখন থেকেই এই প্রশ্নটির উদয় হতে থাকে। অনেকের ক্ষেত্রে বিষয়টি আবার দুশ্চিন্তায় রূপ নেয়। তো আজ আমরা এই ‘এক্সাইজ ডিউটি’ নিয়ে জানার চেষ্টা করব। তো চলুন, আলোচনা শুরু করা যাক।

প্রথমত, Excise Duty বা আবগারি শুল্ককে আমাদের সম্মানিত অনেক গ্রাহক ব্যাংক চার্জ মনে করে ভুল করেন। আসলে এটি মোটেই ব্যাংক কর্তৃক আরোপিত কোন চার্জ নয় বরং এটি সম্পূর্ণভাবে সরকার কর্তৃক আরোপিত এক ধরনের ‘কর’।

আরও দেখুন:
◾ ব্যাংক হিসাবধারীদের জন্য সাধারণ ক্যালকুলেশন

দ্বিতীয়ত, এক্সাইজ ডিউটি আপনার হিসাবে বছরে একবারই অর্থাৎ ডিসেম্বর এর শেষে আরোপ করা হয়। বছরে একবারের অধিক এই কর আরোপ করার কোনো সুযোগ নেই।

তৃতীয়ত, যেহেতু করটি বছরে একবার আরোপ করা হয়; তাই, বছরের কোনো সময় যদি আপনি আপনার হিসাবটি বন্ধ করে দিতে চান তাহলেও কিন্তু, ঐ সময়ে এই করটি আরোপিত হবে কারণ ঐ বছরের শেষে আপনার হিসাবের তো আর কোনো অস্তিত্ব থাকবে না।

চতুর্থত, সঞ্চয়ী, চলতি, এসএনডি, বিভিন্ন ডিপোজিট স্কীম, ফিক্সড ডিপোজিটসহ সকল ধরনের ব্যাংক হিসাবে বছর শেষে কিংবা হিসাব বন্ধ করার সময়ে এই কর আরোপিত হবে। প্রাথমিক আলোচনা শেষ। এবার আসা যাক হিসাবায়ন প্রসঙ্গে।

আপনার ব্যাংক একাউন্টে সারা বছরের কোনো একটা সময়ের ব্যালেন্স বা স্থিতি যদি একটি নির্দিষ্ট সীমা স্পর্শ করে, তাহলেই একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ (প্রযোজ্য হার অনুযায়ী) এক্সাইজ ডিউটি বা আবগারি শুল্ক আপনার একাউন্ট হতে কর্তন করা হয়ে যাবে। অর্থাৎ আপনার সারা বছরের লেনদেন এর উপর ভিত্তি করে এটি কর্তন করা হয়। তবে সারা বছরে যদি আপনার একাউন্টের ব্যালেন্স ১ লক্ষ টাকার নিচে থাকে, তাহলে কোনো আবগারি শুল্ক কর্তন করা হবে না। ব্যালেন্স বা স্থিতি যদি ১ লক্ষ টাকার উপরে চলে যায়, সেক্ষেত্রে প্রযোজ্য হারে এক্সাইজ ডিউটি কর্তন এর প্রসঙ্গ চলে আসবে।

যেমন- ধরা যাক, আপনার হিসাবে ফেব্রুয়ারি মাসের কোনো এক সময়ে আপনার পরিচিতি কেউ একজন ৯০ হাজার টাকা জমা দিলেন। এতে করে আপনার একাউন্টের স্থিতি গিয়ে দাঁড়াল ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। তো সেই ৯০ হাজার টাকা পরদিনই আপনি আবার উত্তোলন করে ফেললেন। এরপর সারা বছরে আর কখনো আপনার ব্যাংক একাউন্টের ব্যালেন্স ১ লক্ষ টাকার উপরে যায়নি। কিন্তু যেহেতু আপনার হিসাবের স্থিতি পুরো বছরে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি মাসে একবার ১ লক্ষ টাকার উপরে উঠেছিল তাই ডিসেম্বর মাসে আপনাকে প্রযোজ্য হারে অর্থাৎ ১৫০ টাকার আবগারি শুল্ক প্রদান করতে হবে। এখন কি বিষয়টা পরিস্কার হলো?

এবার আমরা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এর অর্থ মন্ত্রণালয় এর অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ হতে আবগারি শুল্ক বিষয়ক সর্বশেষ জারিকৃত প্রজ্ঞাপন এস.আর.ও.নং-১৪৩-আইন/২০২০/১০৪-আবগারি, তারিখঃ ১১.০৬.২০২০ অনুসারে আবগারি শুল্ক বিষয়ক প্রযোজ্য হার সম্পর্কে জেনে নিব। আবগারি শুল্ক নির্ভর করে পুরো বছরের যেকোনো সময়ে আপনার হিসাবের সর্বোচ্চ স্থিতি’র উপর (উত্তোলন বা জমা)। এক্ষেত্রে প্রযোজ্য হার হবেঃ

– ০ হতে ১,০০,০০০/- টাকা পর্যন্ত ০
– ১,০০,০০১/- হতে ৫,০০,০০০/- টাকা পর্যন্ত ১৫০/-
– ৫,০০,০০১/- হতে ১০,০০,০০০/- লক্ষ টাকা পর্যন্ত ৫০০/-
– ১০,০০,০০১/- হতে ১,০০,০০,০০০/- লক্ষ টাকা পর্যন্ত ৩০০০/-
– ১,০০,০০,০০১/- হতে ৫,০০,০০,০০০/-লক্ষ টাকা পর্যন্ত ১৫,০০০/- এবং
– ৫,০০,০০,০০১/- হতে তদুর্ধ্ব যেকোনো পরিমাণের জন্য ৫০,০০০/- টাকা।

এই হলো আবাগরি শুল্ক বিষয়ক আলোচনা। চেষ্টা করেছি ছোট পরিসরে আপনাদের প্রশ্নগুলোর বিস্তারিত উত্তর তুলে ধরতে। তারপরেও কোনো জিজ্ঞাসা থাকলে অবশ্যই আমাদের জানান। বর্তমান পরিস্থিতিতে ঘরে বসেই বিভিন্ন ব্যাংকের সব ধরনের ডিজিটাল লেনদেন সেবা গ্রহণ করুন এবং নিরাপদে থাকুন। সবার সুস্থতা কামনা করছি। হ্যাপি ব্যাংকিং।

লেখকঃ প্রণব চৌধুরী, ম্যানেজার, সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, গোলাপগঞ্জ শাখা, সিলেট