একজন শ্রোতার দৃষ্টিতে বিবিসি বাংলার ৮০ বছর পূর্তি
মোঃ জিল্লুর রহমানঃ ১৯৪১ সালের ১১ অক্টোবর বিবিসি (ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন) রেডিও থেকে বাংলা অনুষ্ঠানের সম্প্রচার শুরু। সেই হিসাবে গত ১১ অক্টোবর বিবিসি বাংলা ৮০ বছরে পদার্পণ করেছে। নিঃসন্দেহে একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম হিসেবে এটি বিবিসি বাংলার জন্য একদিকে যেমন গৌরবের অন্যদিকে তেমনিভাবে ঐতিহাসিক ও সম্মানেরও বটে। প্রথম দিকে সপ্তাহে ১৫ মিনিটের অনুষ্ঠান দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের অধীন বাংলা বিভাগ থেকে এখন রেডিওতে প্রতিদিন দুটি অধিবেশনে মোট এক ঘণ্টার অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়। নিরপেক্ষ, নির্ভরযোগ্য এবং বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ ও সংবাদ বিশ্লেষণের জন্য বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষি মানুষের কাছে সংবাদ পরিবেশনের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম এখনও বিবিসি বাংলা।
বিবিসি বাংলার সাথে একজন শ্রোতা হিসেবে আমার পরিচয় সেই বাল্যকালে যখন আমার স্কুলে যাওয়াও শুরু হয়নি। গত আশির দশকের গোড়ার দিকে। আমার প্রয়াত পিতা বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকার দারুণ ভক্ত ছিলেন। তরতাজা খবরের জন্য সকাল বিকাল রেডিও ছিল তার নিত্যসঙ্গী। তার কাছে জেনেছি সেই পঞ্চাশের দশক থেকে নিয়মিত শুনতেন। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বিবিসি বাংলা ছিল তার মতো অনেকের কাছে নির্ভরযোগ্য সংবাদ মাধ্যম, এ কথা বহুবার তার কাছে শুনেছি।
তরতাজা খবর তাকে দারুণভাবে আকৃষ্ট করতো, যা পরবর্তীতে আমাকে নিয়মিত শ্রোতা হতে উৎসাহিত করেছে। আমার মনে আছে, শীতের সকালে আমাকে তার কাধে বসিয়ে আমাদের বাজারের মিষ্টির দোকানে নিয়ে যেতেন এবং সকলকে নিয়ে প্রভাতের বিবিসি শুনতেন। খবর পিপাসু অনেকেই চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে আব্বার রেডিওর পাশে জড়ো হতেন। ছোট্ট আমি অনেক কিছুই বুঝতাম না, কিন্তু বিবিসির সূচনাসঙ্গীতটি আমাকে দারুণভাবে আকৃষ্ট করতো এবং বড় হয়ে এটিই আমাকে বিবিসির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। সে এক দারুণ স্মৃতি ও অভিজ্ঞতা এবং বিবিসি বাংলার ৮০ বছর পূর্তিতে একজন একনিষ্ঠ শ্রোতা হিসেবে নিজে পুলকিত অনুভব করছি।
তবে বড় হয়ে নব্বই দশকের শেষ দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন থেকে নিজের রেডিওতে বিবিসি নিয়মিত শুনছি ও শ্রোতাদের অনুষ্ঠান প্রীতিভাজনেষুতে নিয়মিত লিখছি। ছোট বেলার শোনা বিবিসির সূচনাসঙ্গীত ও প্রয়াত নুরুল ইসলামের দরাজ কণ্ঠের খবর পাঠ এখনো আমার কানে বাজে। বিবিসি বাংলা, লন্ডন থেকে খবর পড়ছি নুরুল ইসলাম- এটি খুব ভালো লাগতো। সিরাজুর রহমান, উর্মি বসু, বিশাখা ঘোষ, সঞ্জয় দাসগুপ্ত, আলী রিয়াজ, আতাউস সামাদ, আতিকুস সামাদ, গোলাম মুর্শিদ, কামাল আহম্মেদ, সুভীর ভৌমিক, কৌশিক শঙ্কর দাস, সুপ্রকাল ঘোষাল, নাজেস আফরোজসহ অনেকের কণ্ঠ হৃদয়ে বাজে। বিবিসি বাংলার সাবেক সম্পাদক সৈদয় মাহমুদ আলীর সামরিক বিশ্লেষণ ছিল সত্যিই অসাধারণ, যার সাক্ষাৎকারভিত্তিক বিশ্লেষণ এখনো মাঝেমধ্যে শুনি।
ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন। |
শুরুর দিকে বিবিসি বাংলার অনুষ্ঠানে সংবাদ গুরুত্ব পেত না, ১৯৬৫ সালে প্রথম যুক্ত হল সংবাদ। ওই বছরে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের নির্ভরযোগ্য আর নিরপেক্ষ খবর হিন্দি আর উর্দুর মতো বাংলা অনুষ্ঠানের প্রচারের দাবি করলেন শ্রোতারা। এই দাবির প্রেক্ষিতে শুরু হল সংবাদ পরিবেশন। দাবির পক্ষে শ্রোতাদের যুক্তি ছিল, জাতীয় বেতারে তারা শুধু কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত খবরই পাচ্ছে। নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে বিবিসি বাংলা বিভাগের সম্পূর্ণ বিবর্তন হয়, গুণী সাংবাদিকের পাশাপাশি একদল নতুন সাংবাদিকের যোগদানের মধ্য দিয়ে। তখন অধিবেশনগুলো সাজানো হত সংবাদ আর নানা ধরনের বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের সংমিশ্রণে। তবে, তখনো বাংলা বিভাগের জন্য সংবাদ সংগ্রহের কোনো নেটওয়ার্ক তৈরি হয়নি। আন্তর্জাতিক খবরগুলো মূলত অনুবাদ করে সম্প্রচারিত হতো।
২০০১ সালে বিবিসি বাংলা অনুষ্ঠানের চেহারা অনেক বদলেছে। বেতারের পাশাপাশি টিভিতে বাংলাদেশ সংলাপ অনুষ্ঠান সম্প্রচারের মাধ্যমে সাংবাদিকতার একটা নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করেছিল বিবিসি বাংলা। তখন নানা আঙ্গিকের অনুষ্ঠানমালার মধ্যে বিবিসি বাংলা’র বেতার ও টিভি অনুষ্ঠান ‘বাংলাদেশ সংলাপ’ ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। তবে, ১৯৪১ সালের যাত্রা শুরুর সময় বিবিসি বাংলাতে প্রতি সপ্তাহে প্রচারিত হতো একটি মাত্র অনুষ্ঠান, যা ছিল মূলত একটি ‘নিউজলেটার’। অনুবাদ করে তা পড়তেন বিভিন্ন জন। এরপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে ভারতীয় বাংলা ভাষাভাষী শ্রোতাদের জন্য শুরু হল ‘বিচিত্রা’ নামের একটি ম্যাগাজিন। অনুষ্ঠানটি প্রযোজনা করতেন কমল বোস এবং রেখা আলী। পূর্ব পাকিস্তানের বাংলা ভাষাভাষী শ্রোতাদের জন্যও ১৯৪৯ সালে তৈরি হল ‘আঞ্জুমান’ নামে আলাদা একটি অনুষ্ঠান। সেটিও ছিল বিচিত্রার ঢঙে। অনুষ্ঠানটি প্রযোজনা করতেন নাজির আহমেদ।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় নিরপেক্ষ সংবাদ প্রচারে বিপুল জনপ্রিয়তা ও বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করেছিল বিবিসি। রেডিও ছাড়াও বাংলা ভাষাভাষী বহু শ্রোতা মধ্যপ্রাচ্য, দূরপ্রাচ্য, আমেরিকা এবং ইওরোপ থেকে এখনো ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিবিসি বাংলার অনুষ্ঠান শোনেন। বিবিসি বাংলা বিভাগের কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয় লন্ডনে নিউ ব্রডকাস্টিং হাউজের সদর দপ্তর থেকে। অন্যদিকে, সারা বিশ্বে ছড়িয়ে রয়েছেন বিবিসির বহু সংবাদদাতা। তাদের পাঠানো তরতাজা প্রতিবেদন, তথ্য, বিশ্লেষণ ইত্যাদি বিবিসি বাংলা নিয়মিতভাবে তাদের অনুষ্ঠানে প্রচার করে থাকে।
ঢাকা, দিল্লি এবং কলকাতায় তাদের নিজস্ব ব্যুরোতে কর্মরত সংবাদদাতারা ছাড়াও লন্ডনে বিবিসি অফিসে কাজ করছেন কয়েকজন সিনিয়র সাংবাদিক ও প্রযোজক। সংবাদভিত্তিক অনুষ্ঠানই এখনো বিবিসি বাংলার সম্প্রচারের মূল উপজীব্য। এ ছাড়া দু’টি অধিবেশনে প্রতিদিন থাকে খেলাধূলার খবরের পাশাপাশি নানা ধরনের ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান। এ ছাড়া থাকে শ্রোতাদের চিঠিপত্রের আয়োজন, বিজ্ঞানের আসর, সাক্ষাৎকার এবং তাদের মতামতের ভিত্তিতে লাইভ ফোন-ইন অনুষ্ঠান।
আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ভয়েস অফ আমেরিকা, চীন আন্তর্জাতিক বেতার, রেডিও জাপান-এনএইচকে ওয়ার্ল্ড, রেডিও তেহরান, ডয়চে ভেলে জার্মানী, রেডিও সৌদিআরব, রেডিও রাশিয়া, রেডিও ভ্যারিতাস ফিলিপাইন ইত্যাদি গণমাধ্যম বাংলা অনুষ্ঠান প্রচার করলেও গত আট দশক ধরে বিবিসি বাংলা তার নিজস্ব স্বকীয়তা ও স্বাতন্ত্র্যবোধ বজায় রেখে শ্রোতার কাছে তার আবেদন ও গ্রহণযোগ্যতা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। শহর, গ্রাম ও বহিঃবিশ্বে বাংলাভাষী শ্রোতার কাছে অন্যান্য আন্তর্জাতিক বেতার অজানা থাকলেও বিবিসি বাংলা এখনো একটি ব্রান্ড। বিবিসি বাংলা ইন্টারনেটের পাশাপাশি ঢাকা, বরিশাল, কুমিল্লা, কক্সবাজার, ঠাকুরগাঁও, চট্টগ্রাম, রংপুর, রাজশাহী, সিলেট এবং খুলনা, এ দশটি বড় শহরে এফএম প্রচার তরঙ্গে অনুষ্ঠান প্রচার করছে।
বিবিসি বাংলা প্রথম ‘প্রভাতী’ নামে একটি সকালের অনুষ্ঠান শুরু করে ১৯৬৯ সালে। অন্য দিকে শহুরে শ্রোতাদের কথা মাথায় রেখে ছ’টার প্রভাতী বহাল রেখেই ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি বিবিসি বাংলার সকালের দ্বিতীয় অধিবেশন ‘প্রত্যুষা’র যাত্রা শুরু হয়। কাকতালীয়ভাবে, ১৩ বছর পর একই দিন, অর্থাৎ ২০২০ সালের ১১ জানুয়ারি ‘প্রত্যুষার শেষ পর্ব প্রচারিত হয়। এই অধিবেশন বন্ধের মধ্য দিয়ে সকালে বিবিসি বাংলার সব অনুষ্ঠান পুরোপুরিই বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে ২০১৮ সালের ৩১ মার্চ বাংলাদেশে সময় ভোর সাড়ে ৬টায় প্রভাতী এবং রাত সাড়ে ১০টায় পরিক্রমার শেষ অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়। তবে, ২০২০ সালের ১১ জানুয়ারি বন্ধ হওয়া রাতের পরিক্রমা অনুষ্ঠান ফের ফিরিয়ে আনা হয়। প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ১ এপ্রিলের আগ পর্যন্ত প্রতিদিন বিবিসি বাংলা রেডিওতে সকালে প্রভাতী ও প্রত্যুষা এবং রাতে প্রবাহ ও পরিক্রমা মিলে মোট চারটি অনুষ্ঠান প্রচার হতো। বর্তমানে বিবিসি বাংলা রেডিওতে দু’টো অনুষ্ঠান কমিয়ে সন্ধ্যা ও রাতের অনুষ্ঠান দুটো চালু রেখেছে। রেডিওতে অনুষ্ঠান কমিয়ে আনলেও বিবিসি বাংলার টিভি অনুষ্ঠান প্রবাহ চ্যানেল আইতে সপ্তাহে একদিন প্রচার হলেও তা কিছুদিন থেকে দুইদিন প্রচার হচ্ছে। এ ছাড়া ক্লিক নামে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক একটি অনুষ্ঠানও প্রচার হচ্ছে।
টিভি কার্যক্রম সম্প্রসারণের পাশাপাশি ফেসবুক, ইউটিউব ও টুইটারে আরো সক্রিয় হয়েছে বিবিসি বাংলা। এরই মধ্যে বিবিসি বাংলার ফেসবুক পেজে ফলোয়ারের সংখ্যা এক কোটি ৩২ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। রেডিওর অডিও কনটেন্ট রাখার পাশাপাশি ডিজিটাল মাধ্যমে টেক্সট, ভিডিও বেশি করে যুক্ত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও সমানতালে উপস্থিত থাকছে এই ব্রিটিশ গণম্যাধ্যমের বাংলা বিভাগ। ১৯৭১ সালে গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বিবিসির ভূমিকা বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। জাতির ঘোর দুর্দিনে এই সংবাদ মাধ্যম কোটি কোটি মানুষের আস্থা ও বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠানে রূপ নেয়। সেই বিভীষিকাময় দিনগুলোতে, যখন বিশ্বে এখনকার মতো এত গণমাধ্যম ছিল না, তখন লন্ডনভিত্তিক বিবিসি প্রায় দিশেহারা বাঙালি জাতিকে সঠিক তথ্য দিয়ে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও অনুপ্রেরণা জোগায়। শুধু তাই নয় বাংলাদেশের বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রাম, ক্রান্তিকাল, নির্বাচন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি বিশেষ করে আশির দশকের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময় বিবিসি বাংলা ছিল গ্রাম, শহর ও বহিঃবিশ্বে নিরপেক্ষ সংবাদের মূর্ত প্রতীক।
২০০৪ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত শীর্ষ ২০ বাঙালির ওপর বিবিসি অনুষ্ঠান প্রচার করে। ফেব্রুয়ারি মাসের ১১ তারিখ থেকে ২২ মার্চ পর্যন্ত বিশ্বের হাজার হাজার শ্রোতা চিঠি, ই-মেইল এবং ফ্যাক্সের মাধ্যমে তাদের মনোনয়ন পাঠায়। শ্রোতাদের মতামতের ভিত্তিতে বিবিসি তৈরি করে শীর্ষ ২০ জন বাঙালির তালিকা। ২৬ মার্চ ২০তম স্থান লাভকারী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নাম প্রথম প্রচারিত হয়। এরপর ১৯ নম্বরে জিয়াউর রহমান, … চার নম্বরে আবুল কাশেম ফজলুল হক, তিন নম্বরে কাজী নজরুল ইসলাম এবং দুই নম্বরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম পর্যায়ক্রমে ঘোষণা করা হয়। এরপর সর্বশেষ ১ বৈশাখ (১৪ এপ্রিল) বিবিসির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি নির্বাচিত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যেভাবে গণমাধ্যমটি ঝুঁকি নিয়ে বস্তুনিষ্ঠ ও সঠিক তথ্য উপস্থাপন করেছে, এখনো এটি সেই ধারা অব্যাহত রেখেছে। গণমাধ্যমের বিস্তারের পাশাপাশি একপেশে সংবাদ পরিবেশনের প্রবণতা বেড়েছে কিন্তু বিবিসি বাংলা তার নিরপেক্ষতা, তথ্যবহুল প্রতিবেদন, বৈচিত্র্যময় অনুষ্ঠান ও পেশাদারিত্বের জন্য গণমানুষের কাছে এখনো জনপ্রিয়।
দীর্ঘদিন ধরে শ্রোতাদের প্রীতিভাজনেষু অনুষ্ঠানে মানসী বড়ুয়ার সুরেলা কণ্ঠের পঠন পাঠন এবং প্রিয় সম্পাদক সাবির মোস্তফা বহুদিন ধরে শ্রোতাদের অভিযোগ, প্রশংসা, টিপ্পনী, সমালোচনা, সুখ-দুঃখ যেভাবে তুলে ধরছেন, তা সত্যিই আমাদের কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করতে হয়। কঠিন প্রশ্নও সাবলীলভাবে তুলে ধরা সত্যিই তাদের অসাধারণ বৈশিষ্ট্য। শাকিল আনোয়ারও দীর্ঘদিন প্রীতিভাজনেষু খুব সুন্দরভাবে প্রযোজনা করেছেন। প্রীতিভাজনেষু এডিটরর্স মেইলবক্স ভবিষ্যতেও যে নামেই থাকুক না কেন, শ্রোতাদের আলোচনা-সমালোচনা, সুখ-দুঃখ, ভালোলাগা, না লাগার অনুভূতি যেন তুলনাহীনভাবেই নিঃসঙ্কোচে প্রচার করে। আশির দশকের শুরু থেকে অদ্যাবধি চার দশক বিবিসির সাথে আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকবো সে প্রত্যাশা করছি। আমার মতো হাজারও শ্রোতা এখনো বিবিসি বাংলার দারুণ ভক্ত। আমি মনে করি এসম্পর্ক শ্রোতা পাঠকের প্রীতিবন্ধনের, এ সম্পর্ক ভালোবাসার, এ সম্পর্ক হৃদয়ের গহীনের। বিবিসি বাংলা তুমি শ্রোতা পাঠকের হৃদয়ের গহীনে চিরকাল আলোর দিশারী হয়ে বেঁচে থাক। বিবিসির প্রাণবন্ত তরতাজা খবর বিবিসিকে চির তরুণের মতো উচ্ছ্বল ও উজ্জ্বল রাখুক, সে প্রত্যাশা করি। বিবিসি অনন্তকাল বেঁচে থাক শ্রোতাদের মনি কোঠায়।
মোঃ জিল্লুর রহমানঃ ব্যাংক কর্মকর্তা ও ফ্রিল্যান্স লেখক।