ব্যালেন্স অব ট্রেড (BOT) কী?
দ্রব্যের আমদানীকৃত রপ্তানীর (+) নীট মূল্যকে বাণিজ্যের ভারসাম্য বলা হয়। আমরা জানি যে লেনদেনের ভারসাম্য একটি দেশের সঙ্গে অন্যান্য দেশের দ্রব্য, সেবাকর্ম, একপাক্ষিক হস্তান্তর, পরিসম্পদের লেনদেনের বিবরণ দেয়। সুতরাং বাণিজ্যের ভারসাম্য একটি দেশের আর্ন্তজাতিক লেনদেনের আংশিক চিত্র দেয়। তবুও বাণিজ্যের ভারসাম্যের উপর যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করাহয়- বিশেষত: দেশের সংবাদ মাধ্যমে এটির উপর বেশী গুরুত্ব আরোপ করা হয়। প্রচার মাধ্যমে গুরুত্ব পাওয়ার একটি কারণ অবশ্য দ্রব্যের আমদানী ও রপ্তানী সংক্রান্ত উপাত্ত তুলনামূলকভাবে সহজে পাওয়া যায়। সেবা কর্ম বা পরিসম্পদের লেনদেনের উপাত্ত কিছুটা দেরীতে পাওয়া যায়।
ব্যালেন্স অব ট্রেড (Balance of Trade) কী?
ব্যালেন্স অব ট্রেড (Balance of Trade- BOT) এর শাব্দিক অর্থ হলো ব্যবসার ভারসাম্য। পারিভাষায় ০১ (এক) বৎসর শেষে কোন দেশের সাথে অন্য সকল দেশের শুধুমাত্র দৃশ্যমান আমদানীর পরিমান থেকে দৃশ্যমান রপ্তানির পরিমান বাদ দেওয়া হলে যা পাওয়া যায় তাকে ব্যালেন্স অব ট্রেড (Balance of Trade) বা বাণিজ্য ভারসাম্য বলে। বাণিজ্য ভারসাম্য বা ব্যালেন্স অব ট্রেড (Balance of Trade) হচ্ছে কোন দেশের অর্থনীতির একটি নির্দিষ্ট সময়ের মোট রপ্তানি ও মোট আমদানির আর্থিক মূল্যের পার্থক্য।
একে নেট রপ্তানীও বলা হয়ে থাকে এবং অনেক সময় একে NX বর্ণদ্বয় দ্বারা প্রকাশ করা হয়। প্রকৃতপক্ষে এটি একটি দেশের আমদানি ও রপ্তানির মধ্যকার সম্পর্ক। ইতিবাচক ভারসাম্যকে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত বলে যখন আমদানির থেকে রপ্তানি বেশি হয়; ইতিবাচক ভারসামকে বলা হয় বাণিজ্য ঘাটতি যা রপ্তানির থেকে আমদানি বেশি হলে হয়। বাণিজ্য ভারসাম্যকে অনেক সময় পণ্য ও সেবার ভারসাম্য- এ দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশ ১৯৭২ সালের শুরুতে নির্বিচার আমদানির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের মাধ্যমে আমদানির বিকল্প পন্থা উদ্ভাবন এবং অনুসরণের নীতি গ্রহণ করে।
ব্যালেন্স অব ট্রেড (Balance of Trade) এর বিশ্লেষণ
বাণিজ্যের ভারসাম্যের অবস্থার ব্যাখ্যা কৌশলপূর্ণ হতে পারে। বাণিজ্যের ভারসাম্যের উদ্বৃত্তকে ভাল এবং ঘাটতিকে খারাপ বিবেচনা করা হয়। উদ্বৃত্তের অর্থ হচ্ছে বিদেশে আমাদের দেশের দ্রব্যের চাহিদা ভাল এবং আমাদের দেশের অধিবাসীরা দেশীয় পণ্য বেশী ক্রয় করছে। সুতরাং দেশীয় অর্থনীতি ভাল অবস্থায় আছে। অপর দিকে ঘাটতির অর্থ আমাদের দ্রব্য বিশ্ববাজারে যথেষ্ট প্রতিযোগিতামূলক নয় এবং আমাদের জীবনযাপনের মান রক্ষা করার জন্য কিছু পরিবর্তন অবশ্য দরকার।
ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন। |
এই বিশ্লেষণকে সঠিক বলা যায় যদি বিশ্ববাজারে আমাদের দ্রব্যের চাহিদার বৃদ্ধি বা হ্রাসের ফলে বাণিজ্যের ভারসাম্যে এই উদ্বৃত্ত বা ঘটতি হয়। কিন্তু অন্যান্য কারণেও বাণিজ্যের ভারসাম্যে ঘাটতি হতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ, বাংলাদেশে প্রাকৃতিক গ্যাস খাতে মুনাফার সুযোগ নেয়ার জন্য বিদেশী বিনিয়োগ আসতে পারে। এজন্য প্রচুর মূল্যবান যন্ত্রপাতি আমদানী করতে হবে এবং ফলে বাণিজ্যের ভারসাম্যে ঘাটতি হবে। কিন্তু এ ধরনের ঘাটতিতে উদ্বিগ্ন হলে ভুল করা হবে। কারণ, এই অতিরিক্ত বিনিয়োগ দেশের উৎপাদনশীলতা ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
ব্যালেন্স অব ট্রেড (Balance of Trade) এর ক্যালকুলেশন পদ্ধতি
একটি বৃহৎ বাণিজ্য ঘাটতিযুক্ত দেশ তার পণ্য ও সেবার জন্য ঋণ নেয়, যখন একটি বৃহৎ বাণিজ্য উদ্বৃত্ত দেশ ঘাটতি দেশগুলোকে ঋণ দেয়। কিছু ক্ষেত্রে, বাণিজ্য ভারসাম্য একটি দেশের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার সাথে সম্পর্কিত হতে পারে। কারণ এটি সে দেশে বিদেশী বিনিয়োগের পরিমাণকে প্রতিফলিত করে।
ডেবিট আইটেমগুলোর মধ্যে আমদানি, বৈদেশিক সহায়তা, বিদেশে দেশীয় ব্যয় এবং বিদেশে অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ক্রেডিট আইটেমগুলোর মধ্যে রফতানি, দেশীয় অর্থনীতিতে বিদেশী ব্যয় এবং দেশীয় অর্থনীতিতে বিদেশী বিনিয়োগ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ডেবিট আইটেমগুলো থেকে ক্রেডিট আইটেমগুলো বিয়োগ করে অর্থনীতিবিদরা মাসিক, ত্রৈমাসিক বা এক বছরের জন্য কোন দেশের জন্য বাণিজ্য ঘাটতি বা বাণিজ্য উদ্বৃত্তির হিসাব করে থাকেন।
আরও দেখুন:
◾ বৈদেশিক মুদ্রা বাজার কি?
◾ ব্যালেন্স অব পেমেন্ট কী?
◾ ইনকোটার্মস বা Incoterms কী?
◾ ফরেক্স কি? ফরেক্স, স্টক এক্সচেঞ্জ এবং অন্যান্য মার্কেট
দৃশ্যমান আমদানী বছরের শেষে ১০০ টাকা এবং দৃশ্যমান রপ্তানি বছরের শেষে ৮০ টাকা। অতএব Balance of Trade (১০০- ৮০)= ২০ টাকা।
কারেন্ট একাউন্ট (Current Account)
কারেন্ট একাউন্ট এর দুইটি উপাদান থাকে যথা-
১) দৃশ্যমান আমদানী-রপ্তানি। যেমন: বিভিন্ন জাতের পন্য সামগ্রী, খাদ্য দ্রব্য।
২) অদৃশ্যমান আমদানী-রপ্তানি। যেমন: সেবা দিয়ে আয় করা এবং সেবা নিয়ে ব্যয় করা।
ক্যাপিটাল একাউন্ট (Capital Account)
ক্যাপিটাল একাউন্ট যেমন- বিদেশ থেকে পাওয়া ঋন ও বিদেশিদের বিনিয়োগ করা অর্থ (Receipt) আবার বিদেশি ঋন পরিশোধ ও বিদেশে বিনিয়োগ করা (payment)।
ট্রান্সফার একাউন্ট (Transfer Account)
ট্রান্সফার একাউন্ট যেমন- উপরের দুই প্রকার লেনদেন করার কারণে যে পার্থক্য থাকে তা Adjustment করার জন্য Gold আমদানী বা রপ্তানি করাকে Transfer Account বা Adjustment Account বলে। এক্ষেত্রে ব্যালেন্স অব পেমেন্ট (Balance of Payment) সব সময় Zero হবে।
ব্যালেন্স অব ট্রেড (Balance of Trade) এর উদাহরণ
উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আগস্ট ২০২০ এ ২৩৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য ও সেবা আমদানি করেছিল এবং ১৭১.৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য ও সেবা অন্যান্য দেশে রফতানি করেছে। সুতরাং আগস্টে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ট্রেড ব্যালেন্স ছিল -৬৭.১ বিলিয়ন ডলার বা বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৬৭.১ বিলিয়ন ডলার।