ফিনটেক

ফিনটেক এবং ব্যাংকিং খাতের ভবিষ্যৎ

. মোহাম্মদ দুলাল মিয়াঃ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয় এমন জনপ্রিয় কিছু ব্যাংকিং বা ব্যাংক ব্যবস্থাপনা বইয়ের শুরুর একটা উদ্ধৃতি মোটামুটি এ রকম—‘ব্যাংক আপনাকে তখনই ঋণ দেবে যখন আপনি প্রমাণ করতে পারবেন যে আপনার ঋণের প্রয়োজন নেই’। উদ্ধৃতিটি যে মোটেও অবাস্তব নয়, তা কেবল ব্যাংক থেকে যারা একবার ঋণ নিয়েছেন, তারা অনুধাবন করতে পারবেন যে হরেক দলিল-দস্তাবেজ দাখিল করেও ঋণের জন্য সময়ের আবর্তে কতটুকু ঘুরপাক খেতে হয়। তবে এটাই ব্যাংকের জন্য স্বাভাবিক। কারণ ব্যাংক হলো ধার করা অর্থের ধারক। অর্থাৎ ব্যাংক আমানতকারীদের কাছ থেকে আমানত গ্রহণ করে তা ঋণ হিসেবে গ্রাহককে দিয়ে থাকে।

আবার ব্যাংক আমানতকারীদের কাছ থেকে চলতি, সঞ্চয়ী এবং স্থায়ী হিসাবে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে আমানত গ্রহণ করে। কিন্তু ঋণ প্রদান করা হয় সাধারণত দীর্ঘ সময়ের জন্য। এখানে ব্যাংকের আমানত এবং ঋণের ক্ষেত্রে সময়সংক্রান্ত একটি ‘গ্যাপ’ তৈরি হয়, যা ব্যাংকের জন্য একটি বড় ঝুঁকি তৈরি করে। আর তাই ঋণ প্রদানের সময় ব্যাংক যথাসম্ভব আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান ঋণগ্রহীতাকে খুঁজে, যাতে ঋণের কিস্তি যথাযথভাবে আদায় করা সম্ভব হয়। অন্যথায় ব্যাংক আমানতকারীদের চাহিদা মেটাতে অপারগ হবে, যা ব্যাংকের দেউলিয়াত্বের সম্ভাবনাকে জাগিয়ে তুলবে।

প্রযুক্তির উন্নয়ন ও ব্যবহারে প্রথাগত এই ব্যাংকিং কার্যক্রমে একটা বড়সড় পরিবর্তন আসন্ন। যেমন ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি (পিয়ার টু পিয়ার) ব্যবস্থা ঋণ আদান-প্রদানে বর্তমানে একটা বড় সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। পিয়ার টু পিয়ার (পি-টু-পি) হলো এমন একটি প্রযুক্তি (ধরুন একটা সফটওয়্যার), যার মাধ্যমে আমানতকারী (ঋণদাতা) সরাসরি ঋণগ্রহীতার সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারবেন এবং নিজেদের মধ্যে লেনদেন সম্পন্ন করতে পারবেন।

এখানে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ব্যাংকের যে ভূমিকা, তা লোপ পাবে। ঋণ ও আমানত-সংক্রান্ত যে ‘সময় গ্যাপ’, পি-টু-পিতে সেই ঝুঁকি অনুপস্থিত। কারণ আমানতকারী নিজেই ঋণদাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন এবং ঋণ প্রদানের সব ঝুঁকি বহন করবেন। এখানে আমানতকারীর আমানতের সম্ভাব্য মেয়াদকাল এবং ঋণগ্রহীতার ঋণের সময়কালের মধ্যে একটা সামঞ্জস্য বজায় থাকবে। পি-টু-পি হলো আর্থিক খাতের প্রযুক্তি ব্যবহারের একটি উদাহরণ মাত্র। প্রযুক্তির এ রকম বহুমাত্রিক ব্যবহার ব্যাংকিং খাত তথা আর্থিক খাতকে আগামীতে অনেক বেশি প্রভাবিত করবে বলেই বিজ্ঞ মহলের ধারণা।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

আর্থিক (ফাইন্যান্সিয়াল) খাতে প্রযুক্তির (টেকনোলজি) ব্যবহারকে সংক্ষেপে ফিনটেক বলে। ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি বোর্ডের (এফএসবি) মতে, ফিনটেক হলো প্রযুক্তিগতভাবে সক্ষম আর্থিক উদ্ভাবন। যেমন নতুন ব্যবসায়িক মডেল, মডেলের প্রয়োগ, প্রসেসিং, পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থা ইত্যাদি, যা আর্থিক পরিষেবা খাতকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। ফিনটেক এরই মধ্যে পি-টু-পি, চেক জমা, অর্থের লেনদেন, বিল পরিশোধ, সম্পদ ব্যবস্থাপনা, ক্রাউড ফান্ডিং ইত্যাদি কর্মকাণ্ডে ব্যাপক সাড়া পেয়েছে। অন্যদিকে ‘ফিয়াট মানি’র (কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক ইস্যুকৃত ধাতব বা কাগজি মুদ্রা) বিকল্প হিসেবে বিভিন্ন ডিজিটাল মুদ্রার (ক্রিপ্টোকারেন্সি) প্রচলন শুরু হয়েছে। যেমন বিটকয়েন, ফেসবুক প্রস্তাবিত লিবরা ইত্যাদি। এগুলোও ফিনটেকের উদাহরণ।

ফিনটেকের বৈশ্বিক বাজার কত, তা সঠিকভাবে শনাক্ত করা কার্যত অসম্ভব। কেননা কেউ কেউ ব্যাংকিং খাতের লেনদেনকে ফিনটেকের আওতাভুক্ত করেছেন আবার কেউ কেউ করেননি। তবে ফোর্বসের তথ্য অনুসারে, ২০১৯ সালে ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের পরিমাণ ছিল ৭ দশমিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০১৮ সালের তুলনায় ১৫৭ শতাংশ বেশি। ইনসুরটেকের (প্রযুক্তি সক্ষম বীমা লেনদেন) পরিমাণ ছিল ৬ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০১৮ সালে যার পরিমাণ ছিল ৪ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (বার্ষিক বৃদ্ধির পরিমাণ ৫৫ শতাংশ)। অন্যদিকে ২০১৯ সালে ডিজিটাল অর্থ প্রদানের (বীমা এবং ব্যাংকিং খাত ছাড়া যেমন কেনাকাটায় ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে আদান-প্রদান ইত্যাদি) পরিমাণ দাঁড়ায় ১৫ দশমিক ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০১৮ সালে ছিল ১২ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

ফিনটেক সেবা প্রদানের নিমিত্তে বিশ্বজুড়ে স্টার্টআপের উত্থান গত কয়েক বছর ছিল চোখে পড়ার মতো। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্টার্টআপের সংখ্যা ছিল ২০ হাজার ৯২৫, যার দুই-পঞ্চমাংশই (৮,৭৭৫) উত্তর আমেরিকা তথা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত। এর পরে রয়েছে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকান দেশগুলো (৭,৩৮৫)। এশিয়া প্যাসিফিক দেশগুলোয় ফিনটেক স্টার্টআপের সংখ্যা হলো ৪ হাজার ৭৬৫। তবে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে চীন বেশ অগ্রগামী। বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম ফিনটেক ফার্ম, ‘অ্যান্ট ফাইন্যান্সিয়াল’ (আলিপের মালিক)-সহ অনেক নামিদামি ফিনটেক ফার্ম রয়েছে চীনে।

ফিনটেক স্টার্টআপগুলো ভবিষ্যতে ব্যাংকিং খাতে কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে, তা নিয়ে রয়েছে ভিন্ন মত। কারো কারো মতে, ব্যাংকিং পরিষেবা অনেকটা সংকুচিত হয়ে আসবে। কারণ ছোট ছোট আকারের ফিনটেক প্রতিষ্ঠান অনেক কম খরচে বেশি দক্ষতার সঙ্গে ব্যাংকিং সেবা প্রদানে সমর্থ হবে। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আর্থিক মধ্যস্থতার প্রতি ইউনিট গড় ব্যয় ২ শতাংশ, যা গত ১৩০ বছরে একই রয়েছে। যদিও এ সময়ে তথ্যপ্রযুক্তির উদ্ভাবন ব্যবহার বেড়েছে অনেক গুণ।

ফিনটেকের একটি প্রতিশ্রুতি হলো, ভোক্তাকল্যাণে উন্নতি করতে আর্থিক পরিষেবার ব্যয় হ্রাস করা। ফিনটেক ফার্মগুলো এখনো নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিয়মের বেড়াজালের বাইরে। ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের মতো নিয়ন্ত্রণ-সংক্রান্ত ব্যয়, শাখা স্থাপনের স্থিতি ব্যয়সহ অনেক রকম বাড়তি ব্যয়ের বোঝা নেই ফিনটেক প্লাটফর্মে। সেই সঙ্গে ফিনটেক প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশ কার্যক্রমের মৌলিক ভিত্তি হলো তথ্যপ্রযুক্তি, যার জন্য লেনদেন ব্যয়ে ব্যাংকের তুলনায় বাড়তি সুবিধা পেয়ে থাকে।

ব্যয় হ্রাসের সঙ্গে সঙ্গে ফিনটেক দ্রুততম সময়ে লেনেদেনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে, যা প্রথাগত ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে সপ্তাহ বা এমনকি কয়েক মাস লেগে যায়। যেমন ক্রেডিট স্কোর রিপোর্ট বা আন্তর্জাতিক অর্থ প্রেরণের মতো কাজে এখনো সপ্তাহ বা তার চেয়েও বেশি সময় নেয়াটা খুবই স্বাভাবিক। তার বিপরীতে ফিনটেক খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এ কাজগুলো সম্পন্ন করে। অনেক ফিনটেক স্টার্টআপ ২৪ ঘণ্টা সেবা প্রদান করে। তদুপরি ফিনটেকের মাধ্যমে সেবায় সব ধরনের লাল ফিতার দৌরাত্ম্য, যা উন্নয়নশীল দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থার একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য, দূর করে যথাসময়ে সেবা প্রদান সম্ভব হয়।

পোর্টফোলিওর বৈচিত্র্য আনয়নে ফিনটেক অনেক বেশি কার্যকরী। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে তথ্যের বিন্যাস-পুনর্বিন্যাস করে সিদ্ধান্ত নেয়া যায়, যা মানুষের বুদ্ধিমত্তায় অনেকাংশেই অসম্ভব। অধিকন্তু, প্রথাগত ব্যাংকিংয়ের একটি বড় সীমাবদ্ধতা হলো পক্ষপাতমূলক আচরণ। যেমন কোনো বিশেষ লিঙ্গের ঋণগ্রহীতাকে প্রাধান্য দেয়া, ছোট ও মাঝারি শিল্পের তুলনায় বড় শিল্পকে বিশেষ সুবিধা প্রদান অথবা মফস্বলের তুলনায় শহরের ঋণগ্রহীতাকে অগ্রাধিকার দেয়া ইত্যাদি। যথাযথ হিসাব সংরক্ষণের অভাব, ইউনিটপ্রতি লেনদেন ব্যয়ের উচ্চহার ব্যাংকগুলোকে ছোট ও মাঝারি শিল্প ঋণে অনুৎসাহিত করে।

এক্ষেত্রে ফিনটেক গাণিতিক পরিভাষা বা অ্যালগরিদম ব্যবহার করে ঋণ প্রদানে পক্ষপাতিত্ব দূর করাসহ তথ্যের জোগান বাড়াতে পারে। যেমন ঋণ আবেদনকারীর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের তথ্য পর্যালোচনা থেকে শুরু করে তাদের ব্যবসার মান শৃঙ্খলা (ভ্যালু চেইন) সহজেই বিশ্লেষণ করা যায়, যা শাখা ব্যাংকিংয়ে অনেকটাই দুষ্কর। ইন্টারনেটভিত্তিক প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে অনেক বেশি ভৌগোলিক অঞ্চল আর্থিক কার্যক্রমের আওতায় আনা যায়, যা পোর্টফোলিওর বৈচিত্র্য নিশ্চিত করে।

ফিনটেক শিল্পের ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি এবং জনপ্রিয়তা মূলধারার ব্যাংকিং খাতে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরিবর্তন আনবে। যেমন ফিনটেক প্লাটফর্মের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে প্রথাগত ব্যাংকিং সেক্টরকে অবশ্যই ব্যয় হ্রাসে প্রবৃত্ত হতে হবে। আমানতের ব্যয় হ্রাস করার পাশাপাশি ব্যাংকের পরিচালনা ব্যয়ও হ্রাস করতে হবে। ব্যয় কমানোর সঙ্গে সঙ্গে সেবার মান বৃদ্ধিসহ দ্রুততম সময়ে লেনদেন সম্পন্ন করতে হবে। এসব বাহ্যিক চাপ শাখা ব্যাংকিংয়ে স্থায়ী বিনিয়োগ কমিয়ে প্রযুক্তিনির্ভর ওয়ানস্টপ সার্ভিস প্রদানে ব্যাংকগুলো সচেষ্ট হবে। অথবা ভ্যালু চেইনের ঊর্ধ্বমুখী (আপস্ট্রিম) অবস্থানে থাকা প্রযুক্তিনির্ভর প্রতিষ্ঠান অধিগ্রহণ করে সফলভাবে টিকে থাকতে চেষ্টা করবে।

শিগগিরই ব্যাংকিং খাতের অভাবনীয় পরিবর্তন আশা করা বাস্তবসম্মত হবে না। যদিও উন্নত বিশ্বে ফিনটেকের ব্যাপ্তি অনেক বেশি এবং বৃদ্ধির হার আকর্ষণীয়, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে ফিনটেকের পরিধি এখনো আশানুরূপ নয়। আসলে এখানে সমস্যাটা কেবল প্রযুক্তির নয়, যদিও প্রযুক্তির উপকারিতা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। ফিনটেক আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে বেশ একটা সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। কিন্তু প্রযুক্তিই শুধু প্রান্তিক জনগণকে আর্থিক সেবার আওতায় আনার জন্য একমাত্র সমাধান নয়।

মানুষের আয় না বাড়লে সঞ্চয়ের ওপর তেমন প্রভাব পড়বে না প্রযুক্তি যতই উন্নত হোক। পাশাপাশি সম্পদের সুস্থ বণ্টন অপরিহার্য। আবার সাধারণ জনগণ, বিশেষ করে প্রান্তিক জনগণ, যাদেরকে ফিনটেক মূলধারার আর্থিক কাঠামোয় যুক্ত করার স্বপ্ন দেখাচ্ছে, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে অনাগ্রহী অথবা তাদের মধ্যে রয়েছে পর্যাপ্ত সচেতনতার অভাব। প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুশিক্ষিত করে না তুললে ফিনটেকের যথাযথ সুবিধা নিতে জাতি অপারগ হবে।

লেখকঃ ড. মোহাম্মদ দুলাল মিয়া, সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ফাইন্যান্স ও অর্থনীতি বিভাগ, নিজওয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ওমান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button