তিন মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র
মধ্যবিত্ত জীবনে সাধ আর সাধ্যের টানাপোড়েন লেগেই থাকে। এর মধ্যেই তিল তিল করে জমা হয় কিছু সঞ্চয়। কখনো সম্পদ বিক্রির টাকা, কখনো পেনশন, এফডিআর অথবা প্রবাসী স্বজনের পাঠানো অর্থে আসে কিছু বিনিয়োগের সুযোগ ও সুবিধা। কিন্তু বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া তো সহজ ব্যাপার নয়। পদে পদে ঝক্কি, লোকসান কিংবা প্রতারণার ঝুঁকি লেগেই আছে। তাই অনেকেই এ ঝুঁকি নিতে চান না। মুনাফা কম হলেও হন্যে হয়ে নিরাপদ বিনিয়োগের ক্ষেত্র খুঁজতে থাকেন। তাদের জন্য তিন মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র হতে পারে আদর্শ বিকল্প একটি বিনিয়োগ। আপনাদের জন্য তিন মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র সংক্রান্ত কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো-
তিন মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র
❏ তিন বছর মেয়াদী এই সঞ্চয়পত্রে মেয়াদান্তে সুদের হার ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ। তবে মেয়াদের আগে এই সঞ্চয়পত্র নগদায়ন করলে সুদের হার হয় কম। আর এক বছরের আগে নগদায়ন করলে কোনো সুদ পাওয়া যায় না।
❏ তিন মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র প্রথম বছর শেষে নগদায়ন করলে ১০ শতাংশ এবং দ্বিতীয় বছর শেষে নগদায়ন করলে সাড়ে ১০ শতাংশ হারে সুদ পাওয়া যায়।
তিন মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের বিক্রয় কেন্দ্র
বাংলাদেশ ব্যাংকের সকল শাখা অফিস, সকল বাণিজ্যিক ব্যাংক, জাতীয় সঞ্চয় পরিদপ্তরের অধীন ৭১টি সঞ্চয় ব্যুরো অফিস এবং সারাদেশে ডাকঘরে তিন মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র কিনতে পাওয়া যায়।
যারা ক্রয় করতে পারবেন
নিম্নে বর্ণিত যে কেউ এই সার্টিফিকেট ক্রয় করতে পারবেন, যথা-
(১) একজন প্রাপ্তবয়স্ক;
(২) একজন নাবালক;
(৩) দুইজন প্রাপ্তবয়স্ক তাদের যৌথ নামে-
(ক) গ্রাহকদের যৌথভাবে প্রদেয় অথবা যে কোনো একজনের লিখিত সম্মতিতে অন্যজনকে প্রদেয়;
(খ) যে কোনো একজনকে প্রদেয়।
(৪) একজন প্রাপ্তবয়স্ক-
(ক) একজন অপ্রাপ্তবয়স্কের পক্ষে, অথবা
(খ) যুগ্ম-নামে দুইজন অপ্রাপ্তবয়স্কের পক্ষে,
(গ) তিনি স্বয়ং একজন অপ্রাপ্তবয়স্কের সঙ্গে যুগ্ম-নামে,
(ঘ) যথাযথ আদালত কর্তৃক কোনো উন্মাদ ব্যক্তির অভিভাবক বা ম্যানেজার নিযুক্ত হয়ে।
ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন। |
সঞ্চয়পত্র ক্রয় পদ্ধতি
❏ নির্ধারিত ফরম (এস.সি-১) যথাযথভাবে পুরণপূর্বক ত্রেতা ও নমিনী (যদি থাকে) প্রত্যেকের ০২ (দুই) কপি ছবি, ক্রেতার জাতীয় পরিচয় পত্র অথবা পাসপোর্ট অথবা জন্ম নিবন্ধন সনদের ফটোকপিসহ আবেদন করতে হবে।
❏ চেক অথবা নগদে সমপরিমাণ অর্থ পরিশোধ করতে হবে। তবে চেকের মাধ্যমে সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের ক্ষেত্রে চেক নগদায়নের তারিখে সঞ্চয়পত্র ইস্যু করা হবে।
[টীকা– সঞ্চয়পত্র ক্রয় ফরমে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর অন্তর্ভূক্তি এবং কর্তৃপক্ষকে উহা প্রদর্শন বাধ্যতামূলক। ক্রেতা জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদর্শন করিতে অপারগ হইলে সেই ক্ষেত্রে পাসপোর্ট অথবা জন্মনিবন্ধন সনদের নম্বর অন্তর্ভূক্তি এবং কর্তৃপক্ষকে উহা প্রদর্শন বাধ্যতামূলক হবে।]
তিন মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র কেনার সীমা ও মেয়াদ
❏ তিন মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র কেনার গ্রহণযোগ্য সর্বোচ্চ পরিমাণঃ চাইলেই যে কোনো পরিমাণ টাকার সঞ্চয়পত্র কেনা যায় না। সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের সীমা বেঁধে দেওয়া আছে। তিন মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে একক নামে ৩০ লাখ টাকা এবং যৌথ নামে ৬০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা যায়।
❏ তিন মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মেয়াদঃ ৩ (তিন) বছর।
❏ মূল্যমানঃ ১,০০,০০০ টাকা; ২,০০,০০০ টাকা; ৫,০০,০০০ টাকা এবং ১০,০০,০০০ টাকা।
❏ আবেদন ফরমঃ তিন মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের ফরম পেতে ক্লিক করুন এখানে
প্রয়ােজনীয় কাগজপত্র
❏ ক্রেতার জাতীয় পরিচয় পত্র অথবা জন্ম নিবন্ধন সনদ অথবা পাসপোর্টের ফটোকপি।
❏ ক্রেতার ই টিন সার্টিফিকেটের ফটোকপি (এক লাখ টাকার উপরে হলে)।
❏ ক্রেতার ছবি দুই (০২) কপি।
❏ নমিনীর জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি।
❏ নমিনীর দুই কপি ছবি (ক্রেতা কর্তৃক সত্যায়িত)।
❏ যে চেকের মাধ্যমে বিনিয়ােগের টাকা দিবেন সেটি ও তার ফটোকপি।
মুনাফার হার ও উৎসে কর
❏ মুনাফার হার- তিন মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র মেয়াদান্তে মুনাফা ১১.০৪%।
❏ ১ লক্ষ টাকায় প্রতি ৩ মাসে প্রদেয় মুনাফা সর্বমােট বিনিয়ােগ ৫ লাখ টাকার কম হলে ২৬২২/= ও উৎসে কর কর্তন ৫%।
❏ বিনিয়ােগের পরিমাণ ৫ (পাঁচ) লাখ টাকার বেশি হলে প্রতি ৩ মাসে প্রদেয় মুনাফা ২৪৮৪/= ও উৎসে কর কর্তন ১০%।
এছাড়া মেয়াদপূর্তির পূর্বেও নগদায়ন করা যায়। তবে মেয়াদপূর্তির পূর্বে নগদায়ন করিলে টেবিল-১ অনুযায়ী মুনাফা পাওয়া যাবে-
টেবিল–১: মুনাফার হার | ||
সময় | মুনাফার হার | প্রতি ১ (এক) লক্ষ টাকায় মূলসহ মুনাফার পরিমাণ |
১ম বছরান্তে | ১০.০০% | ১,১০,০০০.০০ |
২য় বছরান্তে | ১০.৫০% | ১,২১,০০০.০০ |
৩য় বছরান্তে | ১১.০৪% | ১,৩৩,১২০.০০ |
টীকাঃ ১ (এক) লক্ষ টাকায় তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের প্রতি তিন মাস অন্তর মুনাফার কিস্তি সর্বোচ্চ ১১.০৪% হারে টাকা ২,৭৬০.০০ (দুই হাজার সাতশত ষাট) টাকা মাত্র প্রদেয় হবে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে লেভি/মুনাফা কর্তন হবে। কিন্তু যে সকল ক্ষেত্রে মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পূর্বে বিনিয়োগকৃত টাকা উত্তোলন করা হবে, সেক্ষেত্রে টেবিল-১ প্রদর্শিত হারে মুনাফা প্রদেয় হবে, এবং অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধিত হয়ে থাকলে তা মূল টাকা হতে কর্তন করে সমন্বয়পূর্বক অবশিষ্ট মূল টাকা পরিশোধ করতে হবে।
টেবিল–২: অভিহিত মূল্য অনুযায়ী ৩–মাস অন্তর মুনাফার পরিমাণ | |
বিনিয়োগকৃত টাকার পরিমাণ | প্রতি ১ (এক) লক্ষ টাকায় ৩–মাস অন্তর মুনাফার পরিমাণ (টাকায়) |
১,০০,০০০/= | ২,৭৬০.০০ |
২,০০,০০০/= | ৫,৫২০.০০ |
৫,০০,০০০/= | ১৩,৮০০.০০ |
১০,০০,০০০/= | ২৭,৬০০.০০ |
অন্যান্য সুবিধা
❏ এই সঞ্চয়পত্র বাংলাদেশের যে কেউ ক্রয় করতে পারবেন;
❏ নমিনী নিয়োগ করা যায়;
❏ ক্রেতা মৃত্যুবরন করলে নমিনী যেকোন সময় সঞ্চয়পত্র নগদায়ন করতে পারবেন। নমিনীর ইচ্ছানুযায়ী মেয়াদপূর্তির পূর্বে বা পরে সঞ্চয়পত্র নগদায়ন করতে পারবে;
❏ সঞ্চয়পত্র হারিয়ে গেলে, পুড়ে গেলে বা নষ্ট হলে ডুপ্লিকেট সঞ্চয়পত্র ইস্যু করা যায়;
❏ সঞ্চয়পত্র এক অফিস হতে অন্য অফিসে স্থানান্তর করা যায় (সঞ্চয় ব্যুরো হতে সঞ্চয় ব্যুরো, ব্যাংক হতে ব্যাংক এবং ডাকঘর হতে ডাকঘর);
❏ সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের সময় জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা পাসপোর্ট অথবা জন্ম নিবন্ধন সনদপত্রের ফটোকপি এবং ক্রেতা ও নমিনী (যদি থাকে) প্রত্যেকের ০২ (দুই) কপি করে পাসপোর্ট সাইজের ছবি দাখিল করতে হবে।